পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বাজারে ঘোড়ার মাংস বিক্রির অপরাধে দায়ের করা মামলা থেকে সানাউল্লাহ (৩২) ও হামিদুল রহমান (৩৩) নামে দুই ব্যক্তিকে মামলা দেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। একই সাথে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করায় এজাহারকারী বোদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিপন কুমার বসাক ও মামলার তদন্তে গাফফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোদা থানার এসআই জাহেদুল ইসলামে তিরস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সহাকারী কমিশনার ভূমি বোদা ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বোদাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত।
পঞ্চগড় অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমান গত মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) এ আদেশ দিলেও তা বুধবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রকাশ পায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘোড়ার জবেহ করে গোস্ত খাওয়ার অপরাধে এসআই লিপন কুমার বসাক আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) তৎসহ পেনাল কোডের ২৭৩ ধারায় মামলা করে। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে বোদা থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান ও বোদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সুবাহান এজাহারকারীর সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামিদের ৩৫ কেজি ঘোড়ার গোস্ত জব্দ করে।
আরো জানা গেছে, মুসলিমদের হাদিস গ্রন্থ সহি বুখারীর (তাওহিদ প্রকাশনী) ৫৫১৯ ও ৫৫২০, মিশকাত শরীফের ৪১০৭ নং হাদীসে ঘোড়ার গোস্ত হালাল মর্মে উল্লেখ আছে। মুসলিম হিসেবে হালাল প্রাণী জবেহ করা ও খাওয়া তাদের ধর্মীয় অধিকার। দেশের প্রচিলত আইনে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া নিষেধ মর্মে কোথাও উল্লেখ নেই। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বুখারি শরিফের ৫০০৯, ৫০১০ ও ৫০১৪ নং হাদিসে ঘোড়ার গোস্ত হালাল ও বৈধ উল্লেখ আছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সুবাহান জব্দকৃত ঘোড়ার গোস্ত কোনরূপ রাসায়নিক পরীক্ষ ছাড়াই ক্ষতিকর মর্মে উল্লেখ করেছেন। উক্ত ঘোড়ার গোস্তের রাসায়নিক পরীক্ষা করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা দায়িত্ব অবহেলা করেন। এ ঘটনায় কর্মকর্তাগণের খামখেয়ালিপনা ও ভুলের কারণে আসামিদ্বয় এ মামলায় ৭ দিন হাজতবাস করেছেন যা দুঃখজনক। ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া হালাল স্বত্ত্বেও বিনা অপরাধে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার দায়ের করায় এসআই লিপন কুমার বকাস ও মামলার তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসমকে দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকার সতর্ক করে তিরস্কার করা হয়। এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সহাকারী কমিশনার (ভূমি) বোদা, ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বোদাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত। একই সাথে আসামিদ্বয়কে অত্র মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
গত বছর (২০২০ ) ২২ ডিসেম্বরের জেলার বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের চৌধুরীহাটে ঘোড়া জবাই করে মাংস বিক্রির সময় বোদা থানা পুলিশ ৩৫ কেজি ঘোড়ার মাংস জব্দ করে এবং ঘোড়ার মাংস বিক্রির অপরাধে সানাউল্লাহ ও হামিদুর রহমানকে আটক করে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে বোদা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
মুনিয়া