লক্ষ্মীপুরে ১০ টাকা চাওয়ায় শিশু কাউছারকে (৮) হত্যার ঘটনায় মা স্বপ্না বেগমকে (৩০) ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামির ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ১০ টাকা চাওয়ায় আসামি নিজ ছেলেকে গলা টিপে হত্যা করেন। আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে আসামির বয়স, মানসিক অবস্থা ও ১০ বছরের সন্তান থাকায় তাকে মানবিক কারণ বিবেচনায় প্রোভিশনাল রায় দিয়েছেন। এতে আসামি তার বাড়িতেই থাকবেন। এর মধ্যে তিনি কোনো অপরাধে জড়াতে পারবেন না। বিষয়টি জেলা সমাজসেবা কার্যালয় তদারকি করবেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত স্বপ্না সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের চররুহিতা গ্রামের হাসানুজ্জামানের মেয়ে। তার স্বামী রাসেল হোসেন এ মামলার বাদী। তিনি একই গ্রামের কাভার্ড ভ্যানচালক ও মৃত নুরুল আমিনের ছেলে।
আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ১০ টাকা চাওয়ায় শিশু কাউছারকে তার মা স্বপ্না গলা টিপে হত্যা করে। এর ১০ বছর আগে রাসেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে স্বপ্নার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে কাউছার ও ছাব্বির হোসেন নামে দুটি সন্তান জন্ম নেয়। ২০১৭ সালে রাসেল চট্টগ্রামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে স্বপ্নার সঙ্গে তার কলহ সৃষ্টি হয়। সেই মানসিক চাপে প্রায়ই স্বপ্না বিভিন্ন কারণে তার দুই ছেলেকে মারধর করতেন।
ঘটনার দিন স্বপ্না প্রতিবেশী সেলিনা বেগমের ঘরে পিঠা বানাচ্ছিলেন। তার ছেলে কাউছার তখন সেখানে গিয়ে তার কাছে কিছু খাওয়ার জন্য ১০ টাকা চায়। টাকা না দিয়ে তিনি ছেলেকে ঘরে গিয়ে ভাত খাওয়ার জন্য বলেন। এতে কাউছার ঘরে চলে যায়। এরপর তিনিও ঘরে যান। তখন তিনি ছেলেকে ভাত খেয়ে ঘুমানোর জন্য বকা দেন। কিন্তু কাউছার ভাত খাবে না তাকে ১০ টাকা দিতে হবে বলে জেদ ধরে। এতে উত্তেজিত হয়ে তিনি খাটের ওপর ফেলে ছেলের গলা টিপে ধরেন। এরপর ছেলে মারা গেছে বুঝতে পেরে তিনি ঘটনাটি ধাপাচাপা দিতে অন্য কেউ হত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় পরদিন ১৫ অক্টোবর রাসেল বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে শিশু কাউছারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রামণ মেলে। হত্যার পর তার গলায় রশি লাগানো হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১০ মার্চ স্বপ্নার বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডলে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার খন্দকার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।