ইরানে আরও ১০টি বালিকা বিদ্যালয়ে বিষাক্ত গ্যাস হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ১০০ ছাত্রীকে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি’র এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (২ মার্চ) দেশটির উত্তরপশ্চিমের আরদাবিলের সাতটি ও রাজধানী তেহরানের তিনটি স্কুলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলে, আরদাবিলের ১০৮ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাছাড়া, তেহরানে অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীরাও এখন সুস্থ।
এদিকে, বুধবার ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী গ্যাস হামলার প্রথম ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে। জানা যায়, গেলো নভেম্বরে মেয়েদের স্কুলে রহস্যজনক গ্যাস হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ছাত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
দেশটির সংসদের স্বাস্থ্য কমিটির মুখপাত্র জাহরা শেখি বলেন, তেহরানের দক্ষিণের পবিত্র শহর কওমে প্রায় ৮০০ ও পশ্চিমের বোরুজার্দ শহরে ৪০০ ছাত্রীর ওপর বিষাক্ত গ্যাস হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। কওমের স্কুলগুলোতে পাওয়া পদার্থ পরীক্ষা করে নাইট্রোজেনের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ ওয়াহিদিকে এ ঘটনা তদন্ত ও সব ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহিদি বলেন, গ্যাস হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের যে প্রতিবেদন ফার্স থেকে করা হয়েছে, তা মিথ্যা। তাছাড়া হামলায় ব্যবহৃত গ্যাসে একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ শনাক্তের তথ্যও ভুল।
এদিকে, গেলো তিন মাসে ইরানজুড়ে শত শত স্কুলছাত্রী শ্বাসকষ্টে ভুগছে বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। দেশটির এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার দাবি, মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
গেলো রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউনেস পানাহি বলেছিলেন, মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি চক্র কওমের কিছু ছাত্রীর ওপর গ্যাস প্রয়োগ করেছে।
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এ ধরনের কাজ আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান ও আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারামের কর্মকাণ্ডের সমতুল্য। এ দুটি গোষ্ঠী নারীশিক্ষার ঘোর বিরোধী।
এদিকে, এ ধরনের ঘটনা ইরানী জনসাধারণের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে বলে দাবি অনেকের। গেলো বছর থেকে মেয়েদের স্কুলে গ্যাস হামলার ঘটনা ঘটে আসলেও, সরকারের নীরবতা সাধারণ নাগরিকদের মনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।