পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের আসমানী কবিতার রসুলপুড়ের আসমানীর বাড়িকে হাড় মানিয়েছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নগরপাড়া গ্রামের ভূমিহীন বিধবা নেচাভান বিবির বসবাসের একমাত্র কুড়ে ঘরটি। অন্যের জমিতে নির্মিত ঘরটি দীর্ঘদিন থেকে বসবাসের অনুপোযোগী হলেও তার কপালে জোটেনি সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সেচ্ছাসেবীরা জির্ণ ঘরটি মেরামত করতে গেলেও বাধা দিয়েছে জমির মালিক।
দশ বছর আগে ভিতরবন্দ বাজারের পাশের গ্রাম নগরপাড়ার জৈনক ব্যাক্তির বাড়ির পিছনে পরিত্যাক্ত জায়গায় ১২ হাত লম্বা এবং ৮ হাত প্রস্থ্যের দো- চালা কুড়ে ঘরটি নির্মাণ করেন নেচাভানের প্রয়াত স্বামী জোনাই ফকির। সেখানেই এক ছেলেসহ বসবাস করতে থাকেন তারা। কয়েক বছর আগে জোনই ফকির মার যান। এরপর পেট চালাতে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন নেচাভান। এরি মাঝে থাকার ঘরটি বয়সের ভারে জির্ণ হয়ে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় ঘরের বাশের খুটি, বেড়া, এবং চালের টিন। এক বছর আগে ঘরটি একদিকে হেলে পড়ে। পাশের কলাগাছের সাথে কোনমতে ঠেস দিয়ে আটকে আছে ঘরটি।চালের ফুটো দিয়ে রাতের চাঁদ তারা সবকিছুই গোনা যায়। ঘরটির জির্ণ বেরা ছেড়া কাপড় আর চট দিয়ে জোড়াতালি দেয়া। ঘরে নেই ঘুমানোর চৌকি কিংবা অন্য কোন আসবাব। শীতে তিব্র ঠান্ডা আর বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে এই ঘরের মাটিতেই শয়ণ আর এক কোণে চলে রান্না-বান্নার কাজ।
নেছাভান জানান, অনেক কষ্টে এই ঘরে বাস করেন তিনি। কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। বৃষ্টি হলে ঘরের খেতা বালিশসহ সবকিছু ভিজে যায়। এমনকি রাতে বৃষ্টি হলে তাকেও ভিজতে হয়। মাঝে মধ্যে সবকিছু রেখে বাজারের দোকান পাঠের বারান্দায় রাত পার করতে হয় তাকে। বিভিন্ন সময় সরকারী ঘরের জন্য জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরলেও সুফল পাননি তিনি।
সম্প্রতি ঘরটির এমন দূর্বস্থা দেখে স্থানীয় কয়েকজন সেচ্ছাসেবী ঘরটি মেরামতের উদ্যোগ নেন। ঘর মেরামতের অর্থ যোগার করেন। তবে ঘরটি মেরামত করতে গেলে জমির মালিক নিশেধ করেন। কারণ জমির মালিক চাচ্ছেন না নেচাভান সেখানে থাকুক।
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী আশরাফুল আলম জানান, ঘরটি মেরামতের জন্য আমরা ৩০ হাজার টাকা তহবিল সংগ্রহ করি। ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে ঘরটি মেরামতের জন্য গেলে জমির মালিক নিশেধ করেন। পরে ঘরটি আর মেরামত করা হয়নি। তিনি আরোও জানান, ঘরটির যে পরিস্থিতি তা সামান্য ঝড়েই পড়ে যাবে। তখন নেচাভান বিবির থাকার যায়গা থকবে না। সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্ধের তালিকায়ও নাম নেই তার।
নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রক্লপ ২ এর আওতায় চতুর্থ পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলায় মোট ১১৮জন সুবিধাভোগি এবার ঘর পাবেন। তার মধ্যে ভিতরবন্দ ইউনিয়নে রয়েছে দুইজন সুবিধাভোগী। এদের মাছে নেছাভান বিবির নাম নেই।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান জানান, নেছাভান বিবির বিষয়টি খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি প্রকৃত ভূমিহীন হলে আগামীতে তাকে জমি ও ঘর দেয়া হবে।