ঋণসহ নানা কারণে আত্মগোপন করতে চেয়েছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার এক প্রবাসীর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) তাজুল ইসলাম ওরফে নাহিদ ইসলাম। সেজন্য নিজেকে খুনের নাটক করেন তিনি। নিজ বিছানা, বারান্দা ও ঘরে রক্ত লাগিয়ে গা ঢাকা দেন। যাতে লোকজন মনে করে তাকে খুন করে লাশ গুম করা হয়েছে। কিন্তু সেই নাটকের পরিকল্পনা সফল হয়নি। গা ঢাকা দেয়ার ৪০ ঘণ্টার মধ্যে শনিবার রাতে নরসিংদী থেকে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আজ রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ ঘটনায় তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হচ্ছে। সোমবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।
পুলিশ সুপার জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের পূর্বপাড় গ্রামের আবদুল হেকিমের বাড়িতে ১৪ বছর ধরে কেয়ারটেকার হিসেবে রয়েছেন তাজুল ইসলাম (২৮)। হেকিমের দুই ছেলে প্রবাসী। শুক্রবার ভোরে তাজুল খুন হয়েছেন এবং তার লাশ মিলছে না; এমনকি ঘরে রক্তের দাগ রয়েছে বলে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে খুন মনে করে তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি আলামত উদ্ধার করে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা রক্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠায়। ঘরে বালতি ও মগে রঙের আলামত পায় পুলিশ। তাজুলের ঘর থেকে উদ্ধার করা ডায়রিতে বিভিন্ন ঋণের তালিকা দেখতে পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে সন্দেহ হলে পুলিশ তার খোঁজে অভিযান শুরু করে। ৪০ ঘণ্টা বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান ও অভিযানের পর নরসিংদী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আল মামুন জানান, নাহিদ ইসলামের আসল নাম তাজুল ইসলাম। তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা পূর্বপাড়ার হোসেন আলীর ছেলে। প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি হেকিমের বাড়িতে থাকছেন। নিজের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য গোপন করে বিয়ানীবাজারে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করছিলেন। অনলাইনে জুয়া খেলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিশোরগঞ্জেও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। মূলত অপরাধ ও ঋণ থেকে বাঁচতে নিজেকে খুনের নাটক সাজিয়ে গা ঢাকা দেন তাজুল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন ও বিয়ানীবাজার থানার ওসি তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা জানিয়ে ওসি তাজুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগে পৃথক মামলা হবে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতে তোলা হবে।
এদিকে পুলিশ তাজুলের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে লেখাপড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি করেন তাজুল। এতে একজন মারা যান। হত্যা মামলার আসামি হন তিনি। এরপর বাড়ি থেকে পালিয়ে সিলেটের বিয়ানীবাজারে আসেন। আর ফিরে যাননি। তিন বছর আগে তার বাবা মারা গেলেও সেখানকার পুলিশের ভয়ে বাড়ি যাননি। বিয়ানীবাজারে অবস্থানের সময় বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। অনলাইনে জুয়া খেলেছেন।