আর্কাইভ থেকে জাতীয়

বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া, প্রমাণ করলেন শেখ হাসিনা

বাপকা বেটা সিপাইকা ঘোড়া, প্রমাণ করলেন শেখ হাসিনা
বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল উত্তরবঙ্গের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের। মঙ্গাপীড়িত এলাকার উন্নয়নের! উত্তরের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে, খেটে খাওয়া ওইদিন মজুরের হাত দিয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত এই বাংলার উন্নয়ন করতে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েই বুকভরা আশা নিয়েই গড়তে চেয়েছিলেন যমুনা সেতু। পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নিভে যায় এ দেশের আশার প্রদীপ। স্থবির হয়ে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন। এরপর কেটে যায় প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়। একে একে ক্ষমতায় আসে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সহ স্বৈরশাসকগণ। একরাশ মৃত্য ভয় নিয়ে দীর্ঘ ছয় বছর প্রত্যাবর্তন জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে আসেন তারই আদরের কন্যা হাসু। হাল ধরেন বাবার তিলে তিলে গড়ে তোলা সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। শুরু হয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। হামলার শিকার হন একাধিকবার! প্রায় এক যুগ পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসেন ক্ষমতায়। এসেই শুরু করেন পিতার সোনার বাংলা গড়ার! নির্মানাধীন যমুনা সেতুর কাজ সম্পন্ন করেন দ্রুত গতিতে। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু সেতু। স্বস্তি পায় সমগ্র উত্তরের মানুষ! ক্ষমতার সেই সময়েই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে সেতুর সম্ভাব্যতা স্টাডি করান। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে পালাবদল হয় ক্ষমতার! শুরু হয় আবার নির্যাতন এবং দেশ ছাড়ার হুমকি! বারবার চালানো হয় হত্যা চেষ্টা! ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মারতে যা করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে নৃশংস ও নিকৃষ্টতম অধ্যায়। আওয়ামী লীগের দলীয় সমাবেশের শেষে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকল গ্রেনেড। একটি নয়, দুটি নয়, একের পর এক বিস্ফোরিত হতে হতে বিস্ফোরিত হয়েছিল ১১টি গ্রেনেড। সেদিনের সেই অবস্থা দেখে মনে হবে এ যেন এক মহা যুদ্ধক্ষেত্র! বিস্ফোরণ শেষ হওয়ার পর দেখা গেল, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের হাত, পা ও মৃত দেহ! এ যেন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ঘাতকেরা যেই মানুষটিকে হত্যার জন্য এই নৃশংস পরিকল্পনা করেছিল, সেই শেখ হাসিনাই প্রাণে বেঁচে গেলেন আল্লাহর অশেষ রহমতে! ঝরে গেল ২৪টি তাজা প্রাণ! আহত হলেন তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটে ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। শুরু করেন এই দেশের মানুষের ভাগ্য গড়ার! উন্নয়নে জোর দেন যোগাযোগ ব্যবস্থার। সড়ক পথে সংযুক্ত করতে চান দেশের দক্ষিনাঞ্চলের ১৬টি জেলাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে খরস্রোত নদী পদ্মার ওপর সেতু তৈরি করে। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। একই বছরের ১০ অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। পরের বছর ২০১২ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশের সাথে করা ঋণচুক্তিও বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। ২০১৭ সালে কানাডার আদালতেও পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি। একের পর অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোও সরে যায়। কিন্তু শেখের বেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ সিদ্ধান্তে অটল। তিনি তার পিতার মতোই এক কথার মানুষ। তার পিতা যেমন বলেছেন, এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য জীবন দিতেও রাজী আছি। “আমি মৃত্য পরোয়া করিনা, আমি এদেশের মানুষের মুক্তি চাই! তেমনি শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, পদ্মা সেতু হবে, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই এই সেতু হবে। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী ভাইদের ঘামের টাকায় এই সেতু হবে! সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ১৪ হাজার শ্রমিক-প্রকৌশলীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ২০২২ সালে সম্পন্ন হয় সেতুর নির্মাণ কাজ। একই বছরের ২৫ জুন বিপুল উচ্ছাস ও উদ্দীপনার মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ২৬ জুন সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। ১ মে ২০২৩ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংকের অংশীদারত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি চিত্রকর্ম উপহার দেন শেখ হাসিনা। বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেন, শুধু মুখে নয়, কাজের মাধ্যমে কিভাবে জবাব দিতে হয়। কথায় আছে না ‘বাপকা বেটা, সিপাইকা ঘোড়া কুছ নেহি তো থোড়া থোড়া’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেমন, তর্জনি আঙ্গুল সোজা করে পাকিস্তানীদের বলেছিলেন, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ, এবং করেও দেখিয়েছেন। তেমনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের হাতে পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম তুলে দিয়ে কি সেটাই প্রমাণ করলেন শেখের বেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? আবারও দেখিয়ে দিলেন বিশ্ববাসীকে, এ জাতি দমে যাওয়ার নয়!

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বাপকা | বেটা | সিপাইকা | ঘোড়া | প্রমাণ | শেখ | হাসিনা