আর্কাইভ থেকে এশিয়া

করমণ্ডলের যাত্রীদের একটি অংশ ছিলো পরিযায়ী শ্রমিক

করমণ্ডলের যাত্রীদের একটি অংশ ছিলো পরিযায়ী শ্রমিক
বাংলার শ্রমিকরা কেন ভিন রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাচ্ছিলেন?‌ এখানে কাজ নেই বলেই দাবি বিজেপি নেতাদের। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ঘটায় বাংলার বহু পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন। আবার অনেকে আহত অবস্থায় বিভীষিকাময় দিনটির কথা ভেবে শিউরে উঠছেন। এমন পরিস্থিতিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। টানা দু’বছর ধরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। তাই পেটের ভাত জোগাড় করতে একান্ত নিরুপায় হয়েই যেতে হচ্ছিল ভিন রাজ্যে। কাজের খোঁজে তাই শুক্রবার করমণ্ডলে ভিন রাজ্যে যাচ্ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একটি অংশ। তারা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। কেউ বাঁচেন, কেউ মারা যান। এদিকে এই একশো দিনের কাজ করেও টাকা মেলেনি। তাই বাজারে দেনা হয়ে গিয়েছে। বিকল্প পথ হিসাবে ভিন রাজ্যে গিয়ে টাকা রোজগার করে সেই দেনা মেটাতে চেয়ে ছিলেন অনেকেই। তাই ঘটনাস্থলে আহত অবস্থায় অনেকে বলেন, ‘১০০ দিনের টাকা দেয় না বলে যেতে হয় অন্য রাজ্যে।’তারা রেলের গাফিলতি নিয়েও সুর চড়ান। বাড়ি ফিরে একটু সামলে ওঠার পর অনেকে সংবাদমাধ্যমে জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠে আর ভিন রাজ্যে যাবেন না। নিজের গ্রামেই খুঁজে নেবেন কিছু কাজ। আর এই একশো দিনের কাজের টাকা গ্রামের মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে বারবার সোচ্চার হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কী অভিযোগ শ্রমিকদের?‌ অন্যদিকে এই শ্রমিকদের একজন হলেন গোসাবার বাসিন্দা ভারতী সর্দার। একশো দিনের টাকা পাওয়া বন্ধ হওয়ার পর মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে চেন্নাইয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন গত দু’বছর ধরে। শুক্রবারও রওনা দিয়েছিলেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন। ভারতীদেবী বলেন, ‘এখানে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। আগের কাজের মজুরির টাকা এখনও পাইনি। কী করে পেট চলবে? তাই বাধ্য হয়ে ভিন রাজ্যে যেতে হয়। সেখানে ধান কাটার কাজ করে দু’পয়সা রোজগার হয়। এখানে কাজের ব্যবস্থা করে দিলে বাইরে যেতে কেউ চায় না। আমিও যেতে চাই না।’ কেমন অভিজ্ঞতা হল ট্রেনে?‌ ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কথাও জানালেন ভারতীদেবী। ওই মহিলার চোখের সামনে ভেসে ওঠা ঘটনার কথা বলেন, ‘একটা ঝাঁকুনি লাগল। ছিটকে পড়ে গেলাম। জানালার কাচ ভেঙে মুখের উপর এসে পড়ল। পা সিটের তলায় আটকে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল ভেঙে গিয়েছে। তার উপর কয়েকজন মানুষ আমার শরীরের উপর পড়ে যায়। বেঁচে ফিরতে পারব ভাবিনি। তবে আর বাইরে যাব না। মেয়ে জামাইকেও যেতে দেব না। প্রাণ থাকলে তবে তো কাজ? এখানে যা পাব তাই করব।’ এমনই বিভীষিকা নিজের চোখে পরখ করেছেন তিনি। একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই বাসন্তীর কাঁঠালবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সইদুল ও শাহিন লস্করদের গলাতেও একই সুর। জব কার্ড থাকার পরও গত দু’বছর ধরে এই রাজ্যে তাঁদের কাজ নেই। তাই চেন্নাইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন গত কয়েকবছর ধরে। সইদুল বলেন, ‘নিজের ও পরিবারের পেট ভরাতে কাজ করতে হয়। একশো দিনের টাকা বন্ধ হওয়ার পর বাইরে যাই। এবার একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম। আমি আর ট্রেনে চড়তে চাই না।’শাহিন বলেন, ‘এখানে যা কাজ পাব, তাই করব। বাড়ির লোকজনও আর ট্রেনে চড়তে দিতে রাজি নয়।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন করমণ্ডলের | যাত্রীদের | অংশ | ছিলো | পরিযায়ী | শ্রমিক