৯৪ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ৭২ দশমিক ২ শতাংশই জীবনের কোনো না কোনো সময় মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেট দায়ী। জনিয়েছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা।
শনিবার (১০ জুন) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। এক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব: কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি’ শীর্ষক সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস ইউনিটের সদস্য ফারজানা আক্তার।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি তাদের পড়াশোনার মনোযোগ নষ্ট করছে। এ ছাড়া পড়াশোনার ফাঁকে ইন্টারনেট ব্যবহারে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সমীক্ষার কাজ হয়েছে। সমীক্ষায় ১ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন, যার মধ্যে নারী ৪৯ দশমিক ৫ এবং পুরুষ ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের আছেন শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
এতে বলা হয়, ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে এবং ৫৭ দশমিক ২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে।
জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭২ দশমিক ২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবে ইন্টারনেটকে পুরোপুরি দায়ী মনে করেন ২৬ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর মোটামুটি দায়ী ভাবেন ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আসক্তি অনুভব করেন। তাদের মধ্যে ‘খুব বেশি আসক্ত’ ২২ দশমিক ৪ শতাংশ, ‘মোটামুটি আসক্ত’ ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ‘অল্প আসক্ত’ ২০ দশমিক ৯ শতাংশ।
ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরির কথা জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। জরিপে শিক্ষার্থীদের ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে।
শিক্ষার্থীদের ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশের প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। তাদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিমিত ঘুম না হওয়ার পেছনে ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছেন। ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। অন্যের সফলতায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
জরিপের তথ্য অনুসারে, ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ধৈর্যশক্তির হ্রাস ঘটে, ২৬ শতাংশ হঠাৎ রেগে যান, ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ চুপচাপ হয়ে যান। অন্যদিকে, ৩০ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, তাঁরা যখন অফলাইনে থাকেন, তখন একাকিত্বে ভোগেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, মানসিক সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে মানসিক অসুস্থতা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের বড় অংশ প্রোডাক্টিভ কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে তাদের কাছে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক চর্চাও আগের চেয়ে কমে গেছে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার বিপ্লব চন্দ্র সরকার এবং টাঙ্গাইলের ডেপুটি সিভিল সার্জন মারুফ আহমেদ খান।