শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জীবনে চলার পথে যে বাধা হতে পারে না, তা প্রমাণ করে দেখালেন জোড়া লাগা দুই ভাই। প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে পেয়েছেন সরকারি চাকরি। সেখান থেকে প্রতি মাসে তারা পাবেন ২০ হাজার রুপি। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের অমৃতসারে।
জোড়া লাগা দুই ভাই পাঞ্জাবের রাজধানী অমৃতসরে পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডের (পিএসপিসিএল) সাবস্টেশনে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) যোগদান করেছেন তারা। তারা দুই ভাই সাপ্লাই কন্ট্রোল রুমে কাজ করবেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
সোহনা ও মোহনা নামের দুই ভাই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইটিআই) থেকে ডিপ্লোমাধারী। আলোচিত এই দুই ভাইয়ের বয়স ১৯ বছর। তারা অমৃতসারে বসবাস করেন।
পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডের প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেনু প্রাসাদ বলেন, সোহনা ও মোহনা বিরল শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবুও তারা আইটিআই থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চাকরি দেওয়ার আগে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তাতে তারা যথেষ্ট ভালো করেছে। তাদের যথেষ্ট ভালো কারিগরি জ্ঞান রয়েছে। তাই মানবিকতা থেকে নয়, যোগ্যতা দেখেই তাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।
চাকরিতে যোগদানের পর সোহনা ও মোহনা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা ছাত্রজীবন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগ্রহী হয়ে চাকরি দেওয়ায় পাঞ্জাবের রাজ্য সরকারের প্রতি তারা কৃতজ্ঞ।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, ২০০৩ সালের ১৪ জুন দিল্লির একটি হাসপাতালে জোড়া লাগা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে জোড়া লাগা দুই ছেলে শিশু। তাদের হৃদযন্ত্র দুটি, দুই জোড়া হাত, কিড়নি ও স্প্যাইনাল কর্ডসও দুটি। তবে লিভার ও গলব্লাডার একটি এবং পা দুটি।
ছেলেদের এমন অবস্থা দেখে দরিদ্র বাবা মা তাদেরকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে তাদের পৃথক করার জন্য দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে (এআইআইএমএস) ভর্তি করা হয়।
তবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জীবনের ঝুঁকি থাকায় তাদের পৃথক না করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। ফলে একসঙ্গেই বেড়ে উঠতে হয়েছে শিশু দুটিকে।
বাবা-মা ফেলে রেখে যাওয়ায় তাদের দায়িত্ব নেন ‘অল ইন্ডিয়া পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটি’। সেখানেই তাদের বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা, চিকিৎসাসহ সবকিছুই পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটির সহায়তায়।
চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠানটিতে তাদের নাম দেওয়া হয় সোহনা ও মোহনা। শুরু থেকেই তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। পরে বিশেষ কোটায় তারা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (আইটিআই) ভর্তির সুযোগ পায়। সেখান থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
সোহনা ও মোহনা বলেন, আমরা পিঙ্গলওয়াড়া প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের বড় করেছে, শিক্ষিত করেছে এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোহনা ও মোহনা বেড়ে ওঠেন অল ইন্ডিয়া পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটি নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়। ছোটবেলা থেকেই তাদের দেখভাল করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিঙ্গলওয়াড়া চ্যারিটেবল সোসাইটির চেয়ারপারসন ইন্দ্রজিৎ কৌর বলেছেন, সোহনা ও মোহনার সরকারি চাকরিতে যোগদানের বিষয়টি আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গর্বের।
এসআই/