রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত চালু হলো ঢাকা নগর পরিবহনের ৫০টি বাস। রজনীগন্ধা ও সিটি লিংকের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবহন মালিকরা।
ঢাকা শহরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে এই নগর পরিবহন চালু করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। কিন্তু বিদ্যমান রজনীগন্ধা ও সিটি লিংক পরিবহনের ১৬১টি বাস কোন রুটে চলবে তা নির্ধারণ করেনি এই কমিটি।
রজনীগন্ধা ও সিটি লিংক পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই রুটে যাত্রী পরিবহন করেছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, নগর পরিবহন ছাড়া এই রুটে অন্য কোনো বাস চলবে না। অথচ এই দুই পরিবহনের জন্য এখনো বিকল্প ব্যবস্থা করেনি বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। বিষয়টি তাদের বারবার বলা হলেও তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিকরা। এছাড়া পরিবহন চালক এবং অন্যান্য শ্রমিকদের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে যাবে।
ঢাকা নগর পরিবহন যে ৫০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে, এর মধ্যে ৩০টি বাস বিআরটিসির। ২০টি ট্রান্সসিলভা পরিবহনের। এই বাসগুলোর সঙ্গে রজনীগন্ধা ও সিটি লিংকের বেশকিছু বাস যোগ করার দাবি জানিয়েছিল ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। কিন্তু বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি তা যোগ করেনি। কেন যোগ করা হয়নি, তারও উত্তর পাননি মালিকরা। এই কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, তারা রজনীগন্ধা ও সিটি লিংকের বাসগুলোকে যোগ করতে বারবার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি তা গ্রহণ করেনি। এটি নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির দূরত্ব বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকায় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হবে।
২০১৮ সালে ঢাকা শহরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গঠন করে সরকার। এখন পর্যন্ত এই কমিটি ২০টি সমন্বয় সভা করেছে। ছয়টি কোম্পানির অধীনে ঢাকার ২২টি রুটে সব বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে পাইলটিং বা পরীক্ষামূলকভাবে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার পথে ঢাকা নগর পরিবহন চালুর পরিকল্পনা নেয় ওই কমিটি।
সবশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর ডিএসসিসির নগর ভবনে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২০তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ২৬ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ঢাকা নগর পরিবহন চালুর ঘোষণা দেন ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সেই ঘোষণা অনুসারে আজ সকাল পৌনে ১০টায় মোহাম্মদপুরে এই পরিবহনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে পাশাপাশি দুটি কাউন্টার থেকে কিছুক্ষণ পরপর যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে রজনীগন্ধা ও সিটি লিংক পরিবহন। বাসগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামা তদারকি করছেন মালিকপক্ষের লাইনম্যানরা। এই দুটি কাউন্টারকে ঘিরে আশপাশে অর্ধশতাধিক মোটর গ্যারেজ গড়ে উঠেছে।
রজনীগন্ধা পরিবহনের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আশায় ছিলাম, ঢাকা নগর পরিবহনের সঙ্গে রজনীগন্ধার ১২৮টি বাস যোগ হবে। কিন্তু বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি তার অনুমোদন দেয়নি। পরে নতুন রুটের অনুমোদনের জন্য ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের কাছে বাসের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত নতুন রুটের অনুমোদনও পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিবহনের সঙ্গে চালক-শ্রমিকসহ দেড় হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এখন নতুন রুটের অনুমোদন পেতে দেরি হলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। মানবিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্য যে কোনো রুটে অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানাই।’
প্রায় একই কথা বলেন সিটি লিংক পরিবহনের মালিক সৈকত সরকার। তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু আমাদের অন্য রুটে যাত্রী পরিবহনের অনুমোদনের বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে বিবেচনার দাবি জানাই।’
জানতে চাইলে ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বলেন, ‘ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে রজনীগন্ধার যেসব বাসের রুট পারমিট রয়েছে, সেগুলোকে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অন্য রুটে চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হবে। বাকি বাসগুলোর জন্য যে রুটের অনুমোদন নেওয়া, সেখানে চলাচল করবে। একইভাবে সিটি লিংকের যে বাসগুলোর রুট পারমিট ছিল, সেগুলোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) নগরীর শংকরে পথচারী পারাপার সেতুর উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘বাস রুট রেশেনালাইজেশনের কার্যক্রমের জন্য যাত্রী ছাউনি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাস-বে নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে, এই যাত্রাপথে সূচনার মাধ্যমে ঢাকা শহরের পুরো গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করবে।’