আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সবুজ উইকেটে বাংলাদেশের ধারহীন বোলিং

সবুজ উইকেটে বাংলাদেশের ধারহীন বোলিং

ম্যাচ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও নিশ্চিত ছিলেন সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলবেন মুশফিকুর রহিম। আর প্রথম ম্যাচে ইনজুরিতে পরা মাহমুদুল হাসান জয়ের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পাওয়া মোহাম্মদ  নাঈম শেখের হচ্ছে অভিষেক। দেশের শততম টেস্ট ক্রিকেটার তিনি। কিন্তু হঠাৎ পরিবর্তন করতে হলো স্কোয়াডে। কুঁচকির চোটের মুশফিকুর রহিমকে না পেয়ে ম্যাচের আগে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তার জায়গায় দলে ফেরেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। 

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে সব দলেরই চাওয়া থাকে আগে বোল করার। সেই ভাগ্য পরীক্ষায় জিতে গেলেন মুমিনুল হক। কিন্তু দিন শেষে অধিনায়কের মুখে হাসি ফোটাতে পারেননি পেসাররা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে রান পাহাড়ে পিষ্ট করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। টম ল্যাথামের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের পথে স্বাগতিকরা। ল্যাথাম-কনওয়ে জুটিতে ভর করে দলীয় সংগ্রহ ৩৫০ রানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে স্বাগতিকরা।

হ্যাগলি ওভালে ম্যাচের শুরু থেকেই এবাদত-শরিফুলদের ওপর চড়াও হন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। উইল ইয়ংকে সঙ্গে নিয়ে ইঙ্গিত দিতে থাকেন ব্ল্যাকক্যাপসদের স্বরূপে ফেরার। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে খেই হারিয়ে ফেলা দলটির  ওপেনাররা দ্বিতীয় টেস্টের শুরু থেকেই এক প্রকার টেস্ট মেজাজ ভুলে শুরু করেন ব্যাটিং তাণ্ডব। কোনো উইকেট না হারিয়েই ৯২ রান করে প্রথম সেশন পার করে দেয় তারা। প্রথম ঘণ্টায় ১২ ওভারে রান ছিল ৩৪, পরের ঘণ্টায় ১৩ ওভারে আসে ৫৮ রান।

শুরুর দিকে তবু উইকেট না পেলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল তাসকিন আহমেদ-শরিফুল ইসলামের বোলিংয়ে। নতুন বলে ৮ ওভারে কিউইদের রান ছিল ২২। নবম ওভারে আক্রমণে আসেন গত টেস্টের নায়ক ইবাদত হোসেন। প্রথম বলটি অনেক বাইরে করে ল্যাথামের ব্যাটে চার হজম করলেও দ্বিতীয় বলেই তার এলবিডব্লিউর আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার ওয়েন নাইটস। পঞ্চম বলে আরেকবার। দুবারই রিভিউ নিয়ে টিকে যান ল্যাথাম। একবার বল যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে, আরেকবার স্টাম্পের ওপর দিয়ে।

আর দু’তিনবার ব্যাটের কানায় লেগেছে বল। এছাড়া পুরো সময়টাই ল্যাথাম ও ইয়াংকে কোনোরকম বিপাকে ফেলতে পারেনি টাইগার বোলাররা।  লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ইবাদতের বলে ইয়াংয়ের ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় উইেটর পেছনে। প্রথম স্লিপে যা সহজ ক্যাচ হতে পারতো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপ থেকে ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে তা ফেলে দেন লিটন দাস।

স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ১৪৮ রান। থিতু হয়ে বসা সেই জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেন শরিফুল। ৫৪ রান করা উইল ইয়ংকে ফিরিয়ে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। সঙ্গীর বিদায়টা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি ল্যাথামের ব্যাটিংয়ে। দুইবার এলবিডব্লিউ আউট হয়ে রিভিউর মাধ্যমে জীবন ফিরে পেয়ে মারকুটে ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি। কিউই অধিনায়ক ১৩৩ বলে ১৭ বাউন্ডারিতে স্পর্শ করেন ম্যাজিক ফিগার। এরপর কনওয়েকে সঙ্গী করে আবারো শুরু করেন ব্যাটিং তাণ্ডব।

৬৪ তম ওভারের শেষ বলে এবাদতকে চার মেরে দেড়শো রানের কোঠা পূর্ণ করেন ল্যাথাম। একইসঙ্গে দলীয় সংগ্রহ পেরোয় ২৫০ রানের ও শতরানের জুটি হয় কনওয়ের সঙ্গে। এদিকে ৮৩ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেন ডেভন কনওয়েও। প্রথম দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৯৯ রানের। এই দুইজনের ১৫০ রানের জুটিতে ভর করে দলীয় সংগ্রহ ৩০০ পার করে নিউজিল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথাম প্রথম দিনশেষে অপরাজিত ১৮৬ রানে। ডেভন কনওয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে যোগ করেছেন ২০১ রান। এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট হারিয়ে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ছিল ২৮৯ রান, ১৯৯৯ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। কিউইরা পেরিয়ে গেছে সেটিও।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড : 
প্রথম ইনিংস : নিউজিল্যান্ড: ৯০ ওভার (প্রথম দিন); ৩৪৯/১; (ল্যাথাম ১৮৬*, ইয়ং ৫৪, কনওয়ে ৯৯*); (তাসকিন ২২-৫-৬৮-০, শরিফুল ১৮-৬-৫০-১, ইবাদত ২১-১-১১৪-০, মিরাজ ২৫-১-৯৫-০, শান্ত ৪-০-১৫-০)

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সবুজ | উইকেটে | বাংলাদেশের | ধারহীন | বোলিং