আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শুরু হলো সাকরাইন উৎসব; ফানুস ও আতশবাজি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

শুরু হলো সাকরাইন উৎসব; ফানুস ও আতশবাজি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব আজ ১৪ জানুয়ারি, শুক্রবার। ঘুড়ি ওড়ানো, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি সাকারাইন পালিত হয়। সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক উৎসব। এটি বাংলাদেশের পুরানো ঢাকার বৃহত্তম উৎসব। এই উৎসবকে বাংলা পঞ্জিকার পৌষ সংক্রান্তি উৎসব বলা হয়। এ উৎসবে অংশ নেন সব ধর্ম, পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

সকাল থেকে গান বাজনার তালে তালে শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ফুটছে নানা রকম বোম। নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হচ্ছে প্রতিটি বাড়ির ছাদ, চলছে ঘুড়ির সাম্যবাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উৎসবের মুখরতা। বাড়ছে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যাও। পুরান ঢাকার রুপলাল দাস লেন, শ্যাম বাজার, গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধুপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতী বাজার, সদরঘাট এবং লালবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। এছাড়া সন্ধ্যায় আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ।

এদিনটিতে পুরান ঢাকার আকাশে শোভা পায় নানা রং আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি। এছাড়াও আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে সকালের তুলনায় বিকালে এ উৎসব বেশি মুখরিত হয়। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসব উদযাপ‌নে বাংলা ১৪২৮ সা‌লের ৩০ পৌষ শুক্রবার পুরান ঢাকাবাসীর পাশাপা‌শি ঢাকা দ‌ক্ষিন সি‌টি কর‌পো‌রেশনের (‌ডিএস‌সি‌সি) পক্ষ থে‌কে  ব‌্যাপক প্রস্তু‌তি ‌নেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এবার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে নিষিদ্ধ থাকছে ফানুস ও আতশবাজি। এ বছর থার্টিফার্স্টে ফানুস পড়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটায় সাকরাইন উৎসব নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আতশবাজির বিকট শব্দে নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে।
 
বর্তমান ঢাকার পুরান অংশ বছরের এই একটি দিনে বর্ণিল সাজে সেজে ওঠে। ধর্ম-বর্ণ ভুলে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে বেশ আড়ম্বরের মাধ্যমেই পালিত হয় উৎসবটি। প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে বিশেষ মুহূর্তের সেই চাবিকাঠি, যে চাবিকাঠি দিয়ে সে নিজের আনন্দের মুহূর্তটি খুঁজে নিতে পারবে। নিয়মতান্ত্রিক পূজা-পার্বনতো আছেই, সঙ্গে আছে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি নানান পদের খাবার। সেই ভোর সকাল থেকে শুরু হয়ে অনেক রাত অবধি সকল আত্মীয় স্বজনের অংশগ্রহনে পালিত হওয়া সাকরাইন আজ ধর্মীয় গণ্ডি পেড়িয়ে সকলের। 

পৌষের শেষ দিনে পুরান ঢাকার আকাশ থাকে ঘুড়িদের দখলে। আকাশ জুড়ে থাকে নানান রং আর বাহারের ঘুড়িদের দৌরাত্ম। এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার অধিকাংশ অলিগলি আর খোলা ছাদে চলতে থাকে ঘুড়ির সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম। রোদে সুতা শুকানোর কাজও চলে পুরোদমে। যদিও এখন আর মানুষ কষ্টসাধ্য মাঞ্জা দিতে চায় না কারণ সেই মাঞ্জা দেয়া সুতার জায়গা দখল করে নিচ্ছে রক সূতা নামের এক ধরনের সূতা। শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকেলের আকাশে উড়ানো হয় নানান রঙের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটির খেলাও চলে, আর সেই খেলায় কাটা যাওয়া ঘুড়ি ধরতে অলিতে গলিতে শিশুদের ‘বাকাট্টা’ শব্দের মহরা চলে অবিরত। অহরহ কাটা-কাটির খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাধন ছিড়ে কোন দূরে হারিয়ে যায় তা কে বলতে পারে।

ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি আয়োজন করা হয় নানা বাহারি খাবারের । ঘরে ঘরে তৈরি হয় মুড়ির মোয়া, বাখরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। সন্ধ্যায় থাকে আগুন নিয়ে খেলে ও বাহারি আতশবাজি। আর ঐতিহ্যবাহী দিনকে উদযাপন করতে পর্যটকদের ঢল নামে পুরান ঢাকায়। সাধারণত জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখই সাকরাইন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। এছাড়াও একই দিনে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও বেশ জাকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে এই উৎসব। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে এই উৎসব। বিশেষ করে গুজরাটে এই উৎসবটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করা হয়।

মাঘ মাসের প্রথম দিনটি পুরান ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় সাকরাইন উৎসব। একে ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তীও বলা হয়। আগে এ উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় এ দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব ধর্মের সব বয়সী মানুষ।

বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজী ও ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলেছে আতশবাজীর খেলা। সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেই থেকে পুরান ঢাকায় এই দিন‌টি অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে। 

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন শুরু | হলো | সাকরাইন | উৎসব | ফানুস | ও | আতশবাজি | ব্যবহারে | নিষেধাজ্ঞা