আর্কাইভ থেকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র

যেভাবে মারা গেল সাফারি পার্কের ৯ জেব্রা

যেভাবে মারা গেল সাফারি পার্কের ৯ জেব্রা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে  গত ২২ দিনে ৯টি জেব্রার মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, পাঁচটি জেব্রা পাঁচ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এবং চারটি নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মারা গেছে। 

গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে সাফারি পার্কে অবস্থিত ঐরাবত বিশ্রামাগারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির। 

জাহিদুল কবির জানান, ২ জানুয়ারি থেকে পার্কে জেব্রার মৃত্যু শুরু হয়। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৯টি জেব্রা মারা গিয়েছে। জেব্রা মরতে থাকলে ছয় সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি পার্কে মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়। 

তিনি আরও জানান, জেব্রা দলবেঁধে চলে। মৃত্যুর আগ থেকে এদের মধ্যে কোনো রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। প্রাণীগুলো বন্য, এদের কাছেও যাওয়া যায় না। হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পেট ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। এক সময় মারা যাচ্ছে। করোনা সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টগুলো নেগেটিভ এসেছে। এছাড়াও খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে- এমন সন্দেহে খাবারগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস, লিভার, মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবারগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। 

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানান, গত ২ জানুয়ারি থেকে পার্কের আফ্রিকান কোর সাফারির জেব্রা বেষ্টনীতে জেব্রাগুলোর মৃত্যু হয়। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে জেব্রার মরদেহের নমুনা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদ এবং সাভারের কিউসি ল্যাবে পাঠানো হয়। এছাড়া প্রাণীর খাবার (ঘাস, পানি ও দানাদার খাদ্য) বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে জেব্রাগুলোর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন ল্যাব থেকে অন্যান্য প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।

পরে ১১ জানুয়ারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালকের আদেশ মোতাবেক মঙ্গলবার সকালে পার্কের অফিসের সভা কক্ষে ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ বোর্ডের এক সভা আহ্বান করা হয়। পার্কের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও জেব্রার আবাসন ব্যবস্থারও পর্যবেক্ষণ করেন তারা। 

বিকেলে সভা শেষে পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির ও বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্য মো. শহীদুল্লাহ ওইসব জেব্রার মৃত্যুর কারণ ও পার্কের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাত ধরনের পরামর্শ দেন।

তারা জানান, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, ক্লস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরও চারটি জেব্রা মারা গেছে।

পার্ক পর্যবেক্ষণ শেষে তারা যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন তা হলো- জেব্রার বসতির জায়গার মাটি ওলট-পালট করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবাণু ধ্বংস করতে হবে। সাফারি পার্কের জলাধারের পানি পরিবর্তন করতে হবে। জেব্রাগুলোকে টিকার আওতায় আনতে হবে। জেব্রার খাবার হিসেবে পরিপক্ক ঘাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শুকনা খাবার ফাঙ্গাসমুক্ত করে পরিবেশন করতে হবে। ঘাস পানিতে ভালো করে ধৌত করে কেটে পাত্রে পরিবেশন করতে হবে। এসব প্রাণী বেষ্টনীতে বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবস্থা রাখতে হবে। পার্কের অভ্যন্তরে পতিত জমিতে ঘাস উৎপাদন করে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। নাইট ভিশন ক্যামেরাসহ পুরো বেষ্টনীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল কবির বলেন, হঠাৎ করেই এই প্রাণীগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর সিংহভাগই হচ্ছে মাদি। সাফারি পার্কের বিশাল এলাকাজুড়ে জেব্রার বসতি। জেব্রার জন্য রয়েছে কৃত্রিম লেক ও চারণ ভূমি। উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে জেব্রা। তাদের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীরও বিচরণ রয়েছে। প্রতি বছর প্রজননের সময় হলে জেব্রাগুলো একে অপরের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় বড় ধরনের ইনজুরিতে কয়েকটি জেব্রা মারা যায়। এভাবে পার্কে চারটি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে।  

তাসনিয়া রহমান

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন যেভাবে | মারা | সাফারি | পার্কের | ৯ | জেব্রা