ল্যান্ডার বিক্রমকে চাঁদের মাটিতে বুধবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে সেটিকে নামানোর কাজ শুরু হয়। অবতরণ প্রক্রিয়ায় মোট ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। ধাপে ধাপে ল্যান্ডারের গতি কমিয়ে সেটিকে চাঁদের দিকে নামানো হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলে বিক্রম। এর পর বেশ কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর বিক্রমের দরজা খুলে যায়। পেট থেকে বেরিয়ে আসে রোভার। বৃহস্পতিবার সকালে প্রজ্ঞানের অবতরণের কথা জানায় ইসরো। চাঁদে যে সময় বিক্রম পা রেখেছিল, তখন সেখানে সবে ভোরের আলো ফুটেছে। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী আগামী ১৪ দিন সেখানে দিনের আলো থাকবে। এই সময়ের মধ্যে চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে রোভার তথ্য সংগ্রহ করবে। বিক্রম সেই তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে। সৌরশক্তিতে কাজ করবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান।
চন্দ্রযান-৩ চাঁদে সফল অবতরণের পর এই প্রথম রোভার প্রজ্ঞানের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার ভিডিও প্রকাশ করলো ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসে চাঁদের মাটিতে নামল রোভার প্রজ্ঞান। আর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও তুলল ল্যান্ডার বিক্রম। সেই ছবি ইসরোর কাছে পৌঁছতেই তারা এক্স হ্যান্ডলে সেই ভিডিও শেয়ার করেছে।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)-র বিজ্ঞানীরাও চন্দ্রযান-৩ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এরই মধ্যে আবারও উঠে এল ৫০ বছর আগের সেই বিতর্ক। চাঁদের মাটিতে আদৌ মানুষের পা পড়েছিল কি না। যদিও অ্যাপোলো-১১ চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফিরে আসার সময়ে প্রমাণস্বরূপ চাঁদে যাওয়ার সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য, সেখানকার মাটি, টিলার অংশও নিয়ে ফিরে এসেছিল পৃথিবীর মাটিতে। ফেরার সময়ে চাঁদের মাটিতে আমেরিকার পতাকাসহ মহাকাশচারী নিল আমস্ট্রংয়ের ছবিও সঙ্গে তুলে নিয়ে এসেছিল। তা সত্ত্বেও নিন্দকদের মনে দ্বন্দ্ব ছিলই।
চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসার আগেই প্রমাণস্বরূপ ৫০ বছর আগের আরও একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সম্প্রতি। চাঁদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে মানুষের ব্যবহার করা বর্জ্য, মল-সহ ৯৬টি ব্যাগ। চাঁদের পৃষ্ঠে যে হেতু হাওয়া চলাচল করে না, তাই ওই বর্জ্য পদার্থসহ ব্যাগগুলি ৫০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে একই অবস্থায়।
চাঁদে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর ছ’ভাগের এক ভাগ। তাই তরল থেকে শুরু করে কঠিন— সব কিছুই প্রায় ভাসমান। তাই বর্জ্য মল-মূত্র ত্যাগ করা নিয়ে সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। বেশির ভাগ সময়েই মহাকাশচারীদের তাই ডায়াপার পরে কাটাতে হয়। ব্যবহার করা সেই সব ব্যাগ অভ্যাসবশত চাঁদের মাটিতে ছুড়ে ফেলেছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদিও মহাকাশ গবেষণা সংস্থার দাবি, ফেরার সময়ে মহাকাশচারীরা মল ভর্তি সেই ব্যাগগুলি পৃথিবীর মাটিতে ফেরত আনলেও সঙ্গে আনতে পারেননি তাঁদের ব্যবহার করা ডায়াপার এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ। সেগুলির ছবিই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।