একটি চোরাই মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে দুই বছর আগের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ। গাড়ি চোর চক্রের ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়া চা পান করে মারা যান গিয়াস উদ্দিন। তার হত্যাকারীর সঙ্গে জড়িত গাড়ি চোর চক্রের সদস্য মো. রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবি কর্মকর্তা জানান, গেলো ৬ সেপ্টেম্বর মো. রফিকুল ইসলামকে তুরাগ থানার বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম। তিনি একজন পেশাদার গাড়ি চোর চক্রের সদস্য। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি প্রাইভেটকার, পাঁচটি মোটরসাইকেল এবং হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আলামত ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত গিয়াস উদ্দিন মিরপুরের বাসা থেকে আসা-যাওয়ার পথে রাইড শেয়ারিং চালাতেন। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর বিকেল ৩টায় অফিস থেকে বের হয়ে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। রাত ১১টায় উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে তার পরিবার জানতে পারে। সেখান থেকে ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৮ ডিসেম্বর মারা যান। ডাক্তারদের মতে তার মৃত্যুর কারণ ছিল অজ্ঞাত ফুড পয়জনিং। তার মোটরসাইকেল বা মোবাইল ফোন সেসময় পাওয়া যায়নি।
হারুন বলেন, ডিবি-লালবাগ বিভাগ গেলো ১০ ফেব্রুয়ারি চকবাজার থানার একটি গাড়ি চুরি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য মো. রানা শেখকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে মোট নয়টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলগুলোর মালিকানা যাচাই ও তা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি মোটরসাইকেলের মালিক জনৈক গিয়াস উদ্দিন। তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায় তিনি দুই বছর আগেই মারা গিয়েছেন। মারা যাওয়ার ধরন ও মোটরসাইকেল চোরদের অপরাধের ধরনে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে, তদন্ত পায় নতুন মোড়।
রানা শেখকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে উদ্ধার হওয়া মোটরসাইকেলের মালিক গিয়াস উদ্দিন ২০২১ সালে ২৮ নভেম্বরে হত্যা করা হয়েছিল। রানা শেখ গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলামের সাথে মিলে কীভাবে ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনকে হত্যা করে মোটরসাইকেল এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন সে বর্ণনা গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। উঠে আসে সেদিন কীভাবে গিয়াস উদ্দিনকে চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যান।
রানা শেখ জানান, গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম পাঠাও চালক গিয়াস উদ্দিনকে উত্তরায় নিয়ে যাওয়ার পথে কৌশলে সখ্য তৈরি করে চা খাওয়ান। সেই চায়ের মধ্যে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়ার কারণে মোটরসাইকেল চালক অচেতন হয়ে পড়েন। সেই ফাঁকে ভিকটিমের মোবাইলফোন, কিছু নগদ টাকা এবং মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যান। ভিকটিমের মোটরসাইকেলসহ আরও কয়েকটি চোরাই মোটরসাইকেল মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে দেন। আদালতে রানা শেখ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গ্রেফতার রফিকের নামে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চুরির ৪২টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় তিনি গ্রেফতার হলেও আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
যারা রাইড শেয়ার করেন তাদের যাত্রীদের সাথে অতিরিক্ত সখ্যে জড়িয়ে চা, কফি, ডাব বা অন্য কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেন ডিবি প্রধান।