ভিন গ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনের অস্তিত্ব নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে কিনা-এমন প্রশ্ন এখন আর কেউ করে না। বরং তাদের প্রশ্ন-কবে এলিয়েনের খোঁজ মিলবে? মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক কিছু ইঙ্গিত এলিয়েন পাওয়ার দাবি জোরদার করেছে।
অতি প্রাচীনতম প্রাণীর একটি হচ্ছে এলিয়েন। মহাকাশ বিজ্ঞানী টার্নবুল মনে করেন, এদের জন্ম ৩ বিলিয়ন বছর আগে। এক্স-প্ল্যানেট বা সৌরজগনের বাইরের অন্য গ্রহগুলোতে এলিয়েন জীবনধারণ করছে।
১৯৫০ সাল থেকে ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এলিয়েন দর্শনের খবর সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আর এসব খবর মহাকাশ বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠে। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহে জীবন থাকা সম্পর্কে ইঙ্গিত শনাক্ত করেছে। সেখানে পৃথিবীর মতো আরও অনেক গ্রহ রয়েছে বলে নাসা ধারণা করছে।
সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কে২১৮বি নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এক ধরণের গ্যাস শনাক্ত হয়েছে। এই ধরণের গ্যাস সাধারণত পৃথিবীতে সামুদ্রিক জীব দ্বারা উৎপাদন হয়ে থাকে। অর্র্থাৎ মিথেন গ্যাস। বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটির নাম দিয়েছেন ‘গোল্ডিলক্স জোন’। গ্রহটিতে যে তাপমাত্রা রয়েছে তাতে জীবন থাকার জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহটি নিয়ে গবেষণা করছেন একদল বিজ্ঞানী যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নিক্স মধুসূদন।
সম্প্রতি তিনি একটি গণমাধ্যমকে জানান, গোল্ডিলক্স জোনে পাওয়া আলামত ও পাওয়া ইঙ্গিত নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। ওইসব আলামত ও ইঙ্গিত জীবন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে কিনা তা আসছে এক বছরের মধ্যেই জানা যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি এই গ্রহে জীবনের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে মহাবিশ্বে সৌরজগতের বাইরে থাকা অন্যান্য গ্রহেও জীবন থাকতে পারে।
মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধানে যেসব গবেষণা চলছে, এই প্রকল্প সেগুলোর মধ্যে একটি মাত্র। নাসার টার্গেট ২০৩০ সাল নাগাদ হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি (এইচডব্লিউও) বা বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বের করা। এজন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছেন বিশাল বড় টেলিস্কোপ। এগুলো শত শত আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী একটি গ্রহের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ শনাক্ত করতে পারে।
ত্রিশ বছর আগেও অন্য নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে, এমন কোন গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণ ছিল না। বর্তমানে এরকম পাঁচ হাজারের বেশি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। আর এগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
ভিনগ্রহে গ্রহে প্রাণ খোঁজার পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের একটি দল জীবন খুঁজছে সৌরজগতের গ্রহগুলোয়। তারা বলছেন বৃহস্পতির বরফে ঢাকা উপগ্রহ ইউরোপায় প্রাণের অস্তিত্ব থাকার প্রবল সম্ভাবনা থাকতে পারে। ইউরোপার বরফের পৃষ্ঠের নীচে একটি মহাসাগর রয়েছে। এখান থেকেই জলীয় বাষ্পের বরফ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
নাসার ক্লিপার এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএর জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (জুস) মিশন উভয়ই ২০৩০ এর দশকের প্রথম দিকে সেখানে পৌঁছাবে। শনির একটি উপগ্রহে অবতরণ করার জন্য ড্রাগনফ্লাই নামে একটি মহাকাশযানও পাঠাচ্ছে নাসা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই উপগ্রহে কার্বন-সমৃদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি হ্রদ এবং মেঘ রয়েছে। পানির পাশাপাশি এসব রাসায়নিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বলে ধারণা করা হয়।
মহাকাশ বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্জীববিদরা জানান, এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে কিনা তা ২০৩০ এর দশকের মধ্যে বিশ্বাবাসী জেনে যাবে। তারা মনে করছেন, যেসব আলামত ও ইঙ্গিত তারা পেয়েছেন তাতে এলিয়েনের খোঁজ পাওয়ার দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে।