চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী।নরওয়ের নোবেল কমিটি শুক্রবার (৬ অক্টোবর) শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।আর খবরটি কারাগারে বসেই শুনতে পান ইরানের এই নারী নেত্রী।
১২২ বছর পুরনো নোবেল শান্তি পুরস্কারটি পেলেন নার্গিস মোহাম্মদী। ২০০৩ সালের পর দ্বিতীয় ইরানি নারী হিসেবে তিনি পেলেন এই পুরষ্কার।এর আগে ওই বছর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান ইরানের আরেক মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী শিরিন এবাদি। তার প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-ডিফেন্ডার হিউম্যান রাইটস সেন্টারের (ডিএইচআরসি)ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এই নার্গিস মোহাম্মদী।
চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে জন্য মনোনীতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩৫১ জন। প্রতি বছর মনোনীত সংখ্যার ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।২০১৬ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৩৭১।তবে সাড়ে তিনশো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে শেষ হাসি হাসেন ৫১ বছর বয়সী ইরানের এই ‘অগ্নিকন্যা’।
কেন তিনি এই পুরষ্কার পেলেন? ব্ষিয়টি স্পষ্ট করেছেন নোবেল পুরষ্কার কর্তৃপক্ষ। জানিয়েছেন, ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকার জন্য বর্তমানে কারাবন্দি এই মানবাধিকারকর্মীকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
২০১০ সালের ঘটনা।ওই বছরফেলিক্স এরমাকোরা মানবাধিকার পুরস্কার জিতেন শিরিন এবাদি। পুরষ্কার নেয়ার সময় তিনি এটি নার্গিসকে উৎসর্গ করেন। ওইসময় এবাদি বলেন, ‘এ পুরস্কার আমার চেয়ে বেশি প্রাপ্য সাহসী নারী নার্গিস মোহাম্মদীর’।
১৯তম নারী হিসেবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া নার্গিস সত্যিই সাহসী।১৩ বার গ্রেফতার, আদালতে পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত,সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড, ১৫৪টি বেত্রাঘাত,বর্তমানে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ-কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি।নার্গিস মানেই যেনো শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্বে ন্যায়ের,অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে অত্যাচারীর সাহসী লড়াই,তীব্র প্রতিবাদ।
ইমাম খোমেনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি জীবনের শুরু নার্গিসের। তবে নারীর অধিকার নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি করে আসছেন সেই শিক্ষাজীবন থেকে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের ফলে ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে। ইরান সরকারের সমালোচনা করায় ১৯৯৮ সালে গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাভোগ করেন। ২০১১ সালে জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করার দায়ে তার ১১ বছরের সাজা হয়। পরের বছর আপিল করলে সাজা কমে হয় ৬ বছর। পরে ব্রিটিশ সরকারের আবেদনে একই বছরের ৩১ জুলাই মুক্তি পান।
২০১৫ সালের ৫ মে তাকে নতুন অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালে কারাগারে কোভিডে আক্রান্ত হলে তিনি মুক্তি পান। ২০২১ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তাকে আবারো আটক করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী নার্গিস মোহাম্মদী।