আর্কাইভ থেকে এশিয়া

ইসরাইলে হামলা: হামাসের দুই ব্রেন, এক মাস্টারমাইন্ড!

ইসরাইলে হামলা: হামাসের দুই ব্রেন, এক মাস্টারমাইন্ড!
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস শনিবার (৭ অক্টোবর) ইসরাইলে বড় ধরনের হামলা শুরু করে। বুধবার (১১ অক্টোবর) পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধ। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ি,আল আকসা মসজিদের অপবিত্রতা এবং কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ইসরাইলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং এই হামলা পরিচালনাসহ প্রায় সবকিছুর মূলে রয়েছেন হামাসের দুই ব্রেন-আল কাসেম ব্রিগেড ও হামাস গাজা শাখার অপর নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তবে দুর্ধর্ষ অভিযানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে একজনকে। তিনি হচ্ছেন আল কাসেম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ। গত শনিবার মোহাম্মদ দেইফ এক অডিও বার্তায় ঘোষণা দেন ইসরায়েলে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ শুরু হয়েছে। ইসরাইলের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা দেইফের এ ঘোষণার পরপর ওই দেশটিকে লক্ষ্য করে একসঙ্গে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর গাজার সীমান্ত প্রাচীর ভেঙে ইসরাইলে ঢুকে পড়েন হামাসের ১ হাজার যোদ্ধা। গাজায় হামাসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স, আলজাজিরাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়,দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গাজায় অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল।শুধু তাই নয়,গত বছর থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের শহরগুলোতে সামরিক অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী।এছাড়া,ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে  ইসরেইলের  অবৈধ বসতি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ ছিল হামাস। হামাসের ওই সূত্রটির দাবি, ২০২১ সালের পবিত্র রমজান মাসে আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলা চালায়। মুসল্লিদের পেটানো,মসজিদ থেকে বৃদ্ধ ও তরুণদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেওয়ার দৃশ্যগুলো সামনে আসার পরই সুবিধামতো সময়ে ইসরাইলে স্থল,আকাশ ও সমুদ্রপথে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় হামাস। ওই সিদ্ধান্তের প্রায় ২ বছর পর গত শনিবার ইসরাইলের ভেতর ঢুকে হামাস ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা চালানোর নির্দেশ দেন মোহাম্মদ দেইফ।ওই হামলায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ইসরাইলি নাগরিক। অপরদিকে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৯০০ মানুষ। মোহাম্মদ দেইফ খুব বেশি কথা বলেন না বা জনসম্মুখে আসেন না।শনিবার হামাস টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, মোহাম্মদ দেইফ কথা বলবেন— তখনই ফিলিস্তিনিরা বুঝে যান বিশেষ কিছু একটা হতে যাচ্ছে। অবশ্য ওইদিন দেইফ কথা বললেও সরাসরি তিনি টিভি পর্দায় উপস্থিত হননি। এর বদলে তার ছায়া দেখানো হয়। সবমিলিয়ে দেইফের মাত্র তিনটি ছবিই রয়েছে। হামলায় একজন মাস্টারমাইন্ড! হামাসের ওই সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়,হামাসের আল-কাসেম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ ও হামাস গাজা শাখার অপর নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরাইলে শক্তিশালী হামলার সিদ্ধান্ত যৌথভাবে নেন।তবে এটি পরিষ্কার এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী কে ছিলেন। সূত্রটি বলেছে, হামলার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ছিল দুটি ব্রেন, কিন্তু সেখানে ছিল একজন মাস্টারমাইন্ড।ইসরাইলে হামলা চালানোর ব্যাপারে হামাসের মাত্র কয়েকজন কমান্ডার জানতেন। ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ইসরাইলে হামলার ক্ষেত্রে খুবই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল। হামাসের এই বিশেষ সামরিক অভিযানের বিষয়ে ইরান জানলেও সময় ও তারিখ জানতো না। কে এই মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দেইফ? ১৯৬৫ সালে খান ইউনিসের একটি শরণার্থী ক্যাম্পে জন্মগ্রহণ করেন হামাসের আল কাসেম ব্রিগেডের বর্তমান কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ।বাবা-মা তার নাম মোহাম্মদ মাসরি রাখলেও  ১৯৮৭ সালে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রথম ইন্তিফাদায়(ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) যোগ দিয়ে নাম পরিবর্তন করে রাখেন মোহাম্মদ দেইফ। তিনি ১৯৮৯ সালে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং ১৬ মাস কারাবরণ করেছিলেন। গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের উপর ডিগ্রি অর্জন করেন মোহাম্মদ দেইফ। সেখানে তিনি পদার্থ, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন।  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মোহাম্মদ দেইফের তিনটি ছবি পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে আর কোনো ছবি পাওয়া যায় নাই। মোহাম্মদ দেইফ হামাসের নেতৃত্বের পর্যায়ে আসার পর গাজায় বিভিন্ন সুড়ঙ্গ তৈরি করেন এবং হামাসের বোমা তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।একটি সূত্র জানিয়েছে,গত কয়েক দশকে যত ইসরাইলি আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তার সবগুলোর পেছনে ছিলেন দেইফ। আর এ কারণে তিনি ইসরাইলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন। হামাসের অপর একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদ দেইফকে হত্যা করতে সাতবার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরাইল।তবে প্রতিবারই তারা ব্যর্থ হয়েছে। যার সর্বশেষটি ছিল ২০২১ সালে। দেইফ খুব বেশি কথা বলেন না বা জনসম্মুখে আসেন না। ইসরাইলের একটি হত্যাচেষ্টায় মোহাম্মদ দেইফ একটি চোখ ও পা হারান। ২০১৪ সালে ইসরাইলের বিমান হামলায় তার স্ত্রী, সাত মাস বয়সী ছেলে ও ৩ বছর বয়সী মেয়ে নিহত হন। ইসরাইলের এজেন্টদের কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য মোহাম্মদ দেইফ স্মার্টফোনসহ কোনো ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেন না।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ইসরাইলে | হামলা | হামাসের | দুই | ব্রেন | এক | মাস্টারমাইন্ড