আর্কাইভ থেকে ইউরোপ

পাসপোর্ট-ভিসায় নেদারল্যান্ডস যাচ্ছে পথকুকুর

পাসপোর্ট-ভিসায় নেদারল্যান্ডস যাচ্ছে পথকুকুর
অনেককেই বলতে শোনা যায় 'আমার ভাগ্যটাই খারাপ' কিংবা'আমার চেয়ে তোমার ভাগ্য ভালো। কিন্তু কেন কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় বেশি ভাগ্যবান? ভাগ্যের ফের কাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা বলা কঠিন। একথা মানুষের মতোই যে কুকুরের ক্ষেত্রেও সত্যি তা প্রমাণ হয়ে গেল। জয়া নামে নামে একটি পথকুকুর বা স্ট্রিট ডগ পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। বিমানে চেপে সুদূর নেদারল্যান্ডসে যাবে সে। যদিও কুকুর, তবুও তো ভারতীয়। ফলে নিয়ম মেনে বিদেশ যেতে হবে সারমেয়টিকে। তার জন্য ইতিমধ্যে পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভারতে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি পথকুকুর রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পথযাত্রীদের ওপর পথকুকুরদের হামলার অহরহ ঘটনা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। তারপরেও ভারতীয়  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে  কুকুর পোষা ও তাদের যত্ন নেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।  শুধু তাই নয়, জনগণকে কুকুর পোষার পাশাপাশি তাদের প্রতি বৈষম্য না করার আহবান জানান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। একটি কুকুরকে দত্তক নেয়া মানে একটি পরিবারের নতুন সদস্যকে ঘরে আনা বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মেরাল বনতেলবাল নামে নেদারল্যান্ডেসের এক তরুণী ভারতভ্রমণে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে এসেছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে মেরাল জানান, একটি কুকুর পোষার ইচ্ছা ছিল তাঁর। সম্প্রতি বারানশিতে ঘুরতে এসে ভারতের রাস্তার কুকুরদের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। তখনই জয়া নামে ওই পথ কুকুরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।তার সাথে প্রতিদিনই ঘুরে বেড়াতো কুকুরটি। আদুরে স্বভাবের কুকুরটিকে ভালোবেসে ফেলেন তিনি। তবে কুকুরটিকে নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা তখনও মেরালের ছিল না। একদিন রাস্তার অন্য কুকুরগুলো জয়াকে আক্রমণ করে বসে। এতে বেশ আহত হয়, তবে ভাগ্যক্রমে এক নিরাপত্তা রক্ষী এগিয়ে এলে জয়া রক্ষা পায়। এরপর থেকেই জয়ার প্রতি তার ভালবাসা আরো বেড়ে যায় এবং দত্তক নেবেন বলে ঠিক করেন। যেমন কথা তেমনই কাজ। জয়াকে দত্তক নেন মেরাল। তবে দত্তক নেয়ার পর্ব দ্রুত মিটলেও কুকুরের পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি সোজা কথা ছিল না। এর জন্য ভারতে থাকতে মিরালকে ভিসার মেয়াদ আরো ছয়মাস বাড়াতে হয়েছে। এসময়ে পাসপোর্ট-ভিসা প্রস্তুত করে ফেলেছেন। এখন জয়াকে নিয়ে শিঘ্রই উড়াল দেবেন নেদারল্যান্ডসে। এই খুশিতে  ডগমগ মিরাল জানান, তিনি সব সময় একটি  কুকুর রাখতে চেয়েছিলেন। জয়া যখন তার কাছে প্রথম আসে তখন থেকেই তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন মেরাল। জয়াকে তার কাছে রাখতে পারার সব ব্যবস্থা শেষ হওয়ায় তিনি খুবই উচ্ছ্বাসিত। জয়ার এই বারানশির রাস্তা থেকে  নেদারল্যান্ডসের  নতুন জীবনে প্রবেশের ঘটনা মানুষ ও প্রাণির মধ্যে বন্ধন প্রদর্শন করে। যে বন্ধন সীমানার ধার ধারে না, সাংস্কৃতিক পার্থক্যও বাধা হয় না। এর জন্য মেরালকে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, যার যথেষ্ঠ মূল্য আছে। তাতেই বা কী! ভালোবাসার টান বলে কথা। এবার বিমানযাত্রার পালা। খুব শিগগির জয়াকে সঙ্গে নিয়ে নেদারল্যান্ডসে পাড়ি দেবেন ডাচ তরুণী। অসহায় পথকুকুরের ভাগ্যবদলে খুশি পশুপ্রেমীরা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন পাসপোর্টভিসায় | নেদারল্যান্ডস | যাচ্ছে | পথকুকুর