আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বৃক্ষ রোপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বৃক্ষ রোপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় খননকৃত খালের দুইপাড়ে বৃক্ষরোপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি, পুষ্টির যোগান বৃদ্ধি ও পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভু-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যাবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে উপজেলার বোয়ালেরডারা থেকে বেরুবাড়ি সুইগেট পর্যন্ত বিস্তৃত ৬ কিলোমিটার মজা খাল খনন করা হয়। পরে এর দুই পাড়ে অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি, পুষ্টির যোগান বৃদ্ধি ও পরিবেশ উন্নয়নসাধনে সহায়তাকরণে ২০২১ -২২ অর্থবছরে ইআইআর প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার ৫শত ফলজ ও ঔষধি চাড়া রোপনে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৮ লক্ষ টাকা।

জানা যায়, প্রকল্পের শুরু বোয়ালেরডারা থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত (১.৫কিমি) খননকৃত খালের দুই পাড়ে ১০ হাজার বনজ বৃক্ষ রোপনের কাজ পায় নাগেশ্বরী বরেন্দ্র অফিসের পিয়ন পদে কর্মরত মাস্টাররোল কর্মচারী এরশাদুল হকের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইশা ইন্টারপ্রাইজ। পরবর্তী ১৫০০ মিটার থেকে ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত (২.৫ কিমি) ২ হাজার ৫শত টি ফলজ বৃক্ষ ও ৪ হাজার মিটার থেকে ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত (২কিমি) ১০ হাজার বনজ বৃক্ষ রোপনের কাজ পায় রাজশাহী হেতেমখার মেসার্স সাম্মী এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার তসলিম।

দরপত্রের শর্ত মোতাবেক ২০২১ সালের ১৫ আগষ্টের মধ্যে বৃক্ষরোপন শেষ করতে হবে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত রোপনকৃত চারার রক্ষাণাবেক্ষন করতে হবে এবং চারার পরিমাণ, দর ও জাত উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টানাতে হবে ওই ঠিকাদার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইশাইন্টার প্রাইজ কর্তৃক তার নির্ধারিত ১.৫ কিমি এলাকায় রোপনকৃত চারার সংখ্যা প্রায় হাজারখানেক। এর মধ্যে বেশিরভাগ মরে শুকিয়ে গেছে। অথচ গত ২৭ জানুয়ারি বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপে দেখানো হয়েছে এখানে রোপনকৃত গাছের সংখ্যা ১০ হাজার। এর মধ্যে ৭ হাজার ৯০টি গাছ জীবিত দেখানো হয়। তিন ফুট উচ্চতার প্রতিটি বনজ চারার দাম ৬০ টাকা এবং পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি ফলজ বৃক্ষের চারার দাম ২৫০ টাকা ধরে এই ৭ হাজার ৯০ টি গাছের বিপরীতে মোট  ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৪ শত টাকা বিল ধরে শতকরা ৫ ভাগ কমে প্রথম ধাপে (মোট বিলের অর্ধেক) তাকে চলতি বিল ২ লাখ ২০ হাজার ৬৫ টাকা পরিশোধ করে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এদিকে স্থানীয় বাজারে মেহগনিসহ অধিকাংশ বনজ চারার দাম মাত্র ১৫-২৫ টাকা। অপরদিকে একটি দেশি প্রজাতির জাম গাছের চারা স্থানীয় বাজারে যা মাত্র ১০-১৫ টাকায় পাওয়া যায়।

অপরদিকে রাজশাহীর ঠিকাদার তসলিমের প্রথম ২.৫ কিমি এলাকায় ২ হাজার ৫শত টি ফলজ বৃক্ষ এবং পরের ২ কি.মি এলাকায় ১০ হাজার বনজ বৃক্ষের চারা রোপনের কথা থাকলেও সেখানে কিছু মেহগনি ও আকাশমনি জাতের বনজ বৃক্ষের চারা রোপন করেছেন। সব মিলিয়ে এর সংখ্যা হবে প্রায় ২ হাজার। এখানেও বেশিরভাগ গাছ মরে গেছে। আর ফলজ বলতে সেখানে কয়েকটি জাম ছাড়া অন্য কোন ফলজ বৃক্ষের অস্তিত্ব মেলেনি। এখানেও ২৭ জানুয়ারি বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জরিপে ১০ হাজার বনজের মধ্যে ৭ হাজার ১৩১ টি জীবিত দেখানো হয়। একইভাবে দাম ধরে এর বিল ধরা হয় ৪ লক্ষ ২৭ হাজার ৮৬০ টাকা। ফলজ বৃক্ষ ২ হাজার ৫শত এর মধ্যে জীবিত দেখানো হয় ১ হাজার ৭৮৩ টি। যার মুল্য ধরা হয় ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭৫০ টাকা। তার মধ্যে চলতি বিল (মোট বিলের অর্ধেক) যথাক্রমে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৯৩০ টাকা ও ২ লক্ষ ২২ হাজার ৮৭৫ টাকা পরিশোধ করে কর্র্তৃপক্ষ।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রোপনকৃত চারার বিল পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তা অস্বীকার করেন নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপসহকারী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার। তিনি বলেন, রোপনকৃত গাছের কিছু অংশ বিভিন্ন উপায়ে নষ্ট হয়েছে। ঠিকাদার এসব গাছ চলতি বছর জুনের মধ্যে পুনরায় রোপন না করলে বিল দেয়া হবে না।

বেরুবাড়ী সরকারপাড়া গ্রামের মোকাদ্দেস, আহসান আলী, দারাজ উদ্দিন বলেন, এখানে গত বছর বন্যার আগে কয়েকজনকে কিছু গাছের চারা লাগাতে দেখেছি। তারপর আর কাউকে দেখিনি। এখন এখানে কিছু মেহগিনি আর দুই একটা আকাশমনি ছাড়া ছাড়া অন্য গাছের চারা নেই। তার বেশিরভাগ চারা মরে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোর অবস্থা নাজুক।

মিরারভিটা এলাকার আলামিন, আকবর আলী জানান, এখানে ১শ থেকে দেড়শ জাম গাছ ছাড়া অন্য কোন ফলের গাছ লাগানো হয় নাই। যেগুলো লাগিয়েছিলো সেগুলোও গরু ছাগলে খেয়ে নষ্ট করেছে।

নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিসের পিয়ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইশাএন্টার প্রাইজের এরশাদুল হক প্রথম বিল পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি নিজে কোন গাছ রোপন করেনি। উভয় ঠিকাদার কুড়িগ্রামের একজন নার্সারী মালিককে গাছ রোপনের দায়িত্ব দিয়েছেন। কি পরিমাণ গাছ রোপন করা হয়েছে তিনি সেটা জানেন না।

নাগেশ্বরী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আলমগীর কবির এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বরেন্দ্র | বহুমূখী | উন্নয়ন | কর্তৃপক্ষের | বৃক্ষ | রোপন | প্রকল্পে | অনিয়মের | অভিযোগ