আর্কাইভ থেকে এশিয়া

জাপানে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের এক দশক আজ

জাপানে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের এক দশক আজ

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফুকুশিমা বিপর্যয়ের এক দশক আজ। ২০১১ সালে এই দিনে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে ভেসে যায় হংসু দ্বীপ। তছনছ হয়ে যায় দ্বীপের ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

ভূমিকম্প থেকে শুরু হওয়া ১০ মিটারের বেশি উঁচু সুনামিতে প্রাণ হারিয়েছে ১৫,৯০০ মানুষ। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ২,৫২৫ জন। পরমাণু সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে মারা গেছে আরো ৩,৭৭৫ জন।

দিনটি উপলক্ষে পরমাণু বিপর্যয়ে মৃতদের স্মরণ করছে জাপানিরা। টোকিওতে একটি জাতীয় স্মারক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভূমিকম্প আঘাত হানার সময়, বেলা ২টা ৪৬ মিনিটে মুহূর্তের নীরবতা পালন করে লোকজন।

এবারই প্রথম বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকো। অনুষ্ঠানে সম্রাট নারুহিতো বলেছেন, পুনর্নির্মাণ এগিয়ে যাওয়া অনুভব করতে পারলেও নানারকম সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। যাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের কথা চিন্তা করলে হৃদয়ে বেদনা অনুভব করেন তিনি।

জাপানি প্রধানমন্ত্রী সুগা ইয়োশিহিদে বলেন, পুনর্নির্মাণ কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও দুই হাজার মানুষকে এখনও অস্থায়ী নিবাসে থাকতে হচ্ছে। পুনর্নির্মাণ প্রচেষ্টা এগিয়ে নেওয়ায় সরকারের অঙ্গীকারের উপর জোর দেন তিনি।

স্মারক অনুষ্ঠানে স্বজন হারানোর বেদনা তুলে ধরে পরিবারের সদস্যরা। কিভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সেই বর্ণনা তুলে ধরে তারা।

দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত একটি এলাকা ফুকুশিমা জেলা থেকে এসেছেন সাইতো মাকোতো। তিনি বলেন, আমার দ্বিতীয় পুত্র শোতাকে সুনামিতে হারিয়েছি। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। বেঁচে থাকলে এখন জুনিয়র হাই স্কুলের তৃতীয় বর্ষে পড়তো সে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন উপদেশ ওকে দিতে না পারায় গভীর আক্ষেপ বোধ করি। আমি চাই না ওর মৃত্যু বৃথা যায়। একটি প্রাইমারি স্কুলে আমি কাজ করছি। যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে তা শিশুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। জীবন কতটা মূল্যবান, সেই শিক্ষা আমি ওদের দিতে চাই।

ইওয়াতে জেলায় থাকেন ওমি চিহারু। তিনি বেঁচে গেলেও যে পান্থশালায় কাজ করতেন সুনামিতে তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শুধু জাপানের নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রচুর সমর্থন এবং উষ্ণ বক্তব্যের কারণে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পেরেছি। সবকিছু যেখানে বদলে গেছে এমনকি সেরকম কঠিন সময়েও আমি আশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। দুর্যোগের পর থেকে দশ বছর কেটে গেছে। তবে তা সত্ত্বেও যে দুঃখ বুকে ধারণ করছি তা কখনও মুছে যাওয়ার নয়।

ওই ঘটনার এক দশক পরও এক্সক্লুসিভ জোনটি যেমন ছিলো তেমনই আছে। ওই কেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হওয়ায় ঘরে ফিরতে পারেনি সেখানকার বেশিরভাগ অধিবাসী। দ্রুত আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন জাপানে | ফুকুশিমা | বিপর্যয়ের | এক | দশক | আজ