ইসরায়েলের ওপর গত ৭ অক্টোবরের হামলায় স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আরও পাঁচটি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী। আর এই হামলা চালাতে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপনে তারা যৌথভাবে সামরিক মহড়া চালায়। ২০২০ সাল থেকে ওই সামরিক মহড়া চালানোর পর গত ৭ অক্টোবর আকাশ ও স্থলপথে ইসরায়েলে আচমকা হামলা শুরু করে হামাসসহ ফিলিস্তিনের ওই পাঁচ সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইসরাইলের সীমানা থেকে এক কিলোমিটার কম দূরত্বে তারা এই মহড়াগুলো সম্পন্ন করে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়,২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর চারটি মহড়ার মধ্যে প্রথমটিকে (যার কোডনেম ছিল স্ট্রং পিলার) গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে "শক্তিশালী বার্তা এবং ঐক্যের চিহ্ন" হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়েহ ।
ওই মহড়ায় জিম্মিদের কিভাবে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া হবে, কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর কৌশল এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলাসহ বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করেন হামাস যোদ্ধারা। তাদের শেষ মহড়াটি হয়েছিল ইসরায়েলে হামলার মাত্র ২৫ দিন আগে।
মহড়া শুরু হওয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ভিডিও পোস্ট করেছিল হামাস। যেখানে প্যারাগ্লাইডিং, প্রতিকী ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটি এবং ট্যাংক দখলসহ নানা যুদ্ধকৌশল চর্চা দেখানো হয়।
হামাসের প্রশিক্ষণ ব্যহত করতে “স্ট্রং পিলার” মহড়ার জন্য ব্যবহৃত স্থানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রথম বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সীমান্তের কাছে অস্বাভাবিক উচ্চতায় উড়ে বেড়ানো সন্দেহজনক ড্রোন এবং হামাসের কার্যকলাপ নিয়ে পাঠানো সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিল নেতানিয়াহু প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ি আল আকসা মসজিদের অপবিত্রতা এবং কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর স্থল ও আকাশ পথে নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গাজায় অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, গত বছর থেকে ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের শহরগুলোতে সামরিক অভিযান দেশটির সেনাবাহিনী। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে রকেট হামলা চালায় হামাস। আর এর জবাবে বিমান হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল।
হামাসের হামলায় দেশটির ১ হাজার ২০০ জন বেসমারিক নিহত হন। সেদিন ইসরায়েলের ২৪০ জনকে জিম্মিও করে হামাস। হামলার প্রতিক্রিয়ায় সেদিনই গাজায় নির্বিচারে বোমা হামরা শুরু করে ইসরায়েল বাহিনী। এর পর থেকে অব্যাহত হামলায় গাজার ১৫ হাজারের বেশি বাসিন্দা নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সবশেষে হামলার ৪৯ তম দিনে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। যুদ্ধবিরতির সময়সীমা শেষে গাজায় আবারও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।