বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের মনঃপুত না হলে বাংলাদেশে ‘আরব বসন্তের মত’ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আসছে সপ্তাহগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আরো বড় পরিসরে চাপের অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।’ শুক্রবার(১৫ সেপ্টেম্বর) সরকারি এক বিবৃতিতে এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করে রাশিয়া।
আসছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক মাস ধরেই নির্বাচন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় জানানোর পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ ঢাকা সফরে আসা একাধিক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ।একই ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলও একাধিকবার ঢাকা সফরে আসে।
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নাক গলানো শুরু থেকেই ভালো চোখে দেখেনি রাশিয়া ও চীন। এব্যাপারে অবশ্য সরাসরি বিবৃতি দিয়ে ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেছে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের তৎপরতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চরম হস্তক্ষেপের শামিল বলেও জানায় পুতিন প্রশাসন।
৭ জানুয়ারি নির্বাচন মনপুত না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিতে পারে তার ব্যাপারে শুক্রবার ঢাকাকে সতর্ক করে মস্কো।এদিন, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যদি জনগণের ইচ্ছার প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের মনঃপুত না হয়, আরব বসন্তের মত ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল করার পরবর্তী প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে।’
২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণ আন্দোলনের ঢেউ বয়ে যায়। সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া, মিশরে, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে। বেন আলী,হোসনি মুবারক, মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফির মত দীর্ঘদিনের শাসকদের পতন ঘটে।পশ্চিমা সাংবাদিকদের লেখায় দেশে দেশে ওই আন্দোলন ‘আরব বসন্ত’ নাম পায়। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসব আন্দোলন সফল হয়।
বিবৃতিতে মারিয়া জাখারোভা আরও বলেন, নির্বাচনের পর বাংলাদেশের প্রধান শিল্পগুলো আক্রমণের শিকার হতে পারে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নাগরিকের গণতান্ত্রিক ইচ্ছার প্রতিফলনের বাধাগ্রস্ত করেছেন’, এমন প্রমাণহীন বিষয়ে অভিযুক্ত হতে পারেন।
ওয়াশিংটনের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওয়াশিংটনের বোধ ফিরবে এবংএকটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্পষ্ট হস্তক্ষেপ থেকে তারা বিরত থাকবে– সে সম্ভাবনা খুবই কম।’
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাক্য বিনিময় চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এর আগে রাশিয়া অভিযোগ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারবিরোধী সমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে বিরোধীদলের এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, বাংলাদেশ বিষয়ে রাশিয়া যে বক্তব্য রেখেছে, সেটি তাদের ‘ধারাবাহিক অপব্যাখ্যার’ অংশ। শুধু তাই নয়, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়,জনগণ যা চায়, আমরাও তাই চাই।সেটি হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হবে।আমাদের ও বাংলাদেশের জনগণ উভয়ের লক্ষ্য হচ্ছে— শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
রাশিয়ার বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বক্তব্যকে নাকচ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কোনো সম্ভবনা নেই বাংলাদেশে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অর্জন’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রাশিয়া কি বলেছে, এটা আমাদের ইস্যু না। এটা ওদের জিজ্ঞেস করেন। অনেকে অনেক ধরনের কথা বলবে কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা সার্বভৌম, আমাদের ভারসাম্য পররাষ্ট্রনীতি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এটার প্রেক্ষিতে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। কে কি বলল না বলল, এটা তাদের মাথাব্যথা। আমরা পরাশক্তিগুলোর টানাটানিতে পা দিতে চাই না। আমাদের ভারসাম্য কূটনীতি নিয়ে আমরা চলতে চাই।’ বক্তব্যে যোগ করেন মোমেন।’
এসময় আরব বসন্তের সম্ভাবনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না। এ ধরনের কোনো সুযোগ নাই। আমরা একটা গণতান্ত্রিক দেশ। শেখ হাসিনার কারণে আমাদের দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত আছে। আর আমরা ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করব। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেটা করব। আমরা খুব ভালোভাবে চলছি।’