আর্কাইভ থেকে বিএনপি

নির্বাচনে দিল্লি প্রকাশ্য প্রভাব খাটাচ্ছে, জনগণ উদ্বিগ্ন: রিজভী

নির্বাচনে দিল্লি প্রকাশ্য প্রভাব খাটাচ্ছে, জনগণ উদ্বিগ্ন: রিজভী
‘‘অতীতের মতো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিল্লির প্রকাশ্য প্রভাবে বাংলাদেশের জনগণ উদ্বিগ্ন।দিল্লি থেকে বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়। অথচ বিএনপিসহ অধিকাংশ দলবিহীন এই নির্বাচনকে তারা সমর্থন দিচ্ছে। তার মানে, গণতন্ত্র তাদের কাছে এখন অপাঙ্‌ক্তেয়।’ শুক্রবার(২২ ডিসেম্বর) বিকেলে আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় কূটনীতিকেরা বাংলাদেশে এসে প্রকাশ্যে একতরফা ডামি নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বৈঠক বসছে দিল্লিতে, যা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়। ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন,‘ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মতো দেশটির গণমাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকেরা যেসব মতামত প্রকাশ করছেন, তার প্রায় সবই তাঁদের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়। দিল্লি বাংলাদেশেও কি লেন্দুপ দরজি চায়? এমন প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘জনগণের প্রশ্ন দিল্লি কি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তে একটি গণবিরোধী ভোট ডাকাত দলের সঙ্গে সম্পর্ক চায়? তবে বাংলাদেশের জনগণ চায় দিল্লি সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করুক, জনগণের ভোটের অধিকার গলা টিপে হত্যার পক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করুক।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘সরকার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে নাশকতা ও জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করছে। আমরা জানতে পেরেছি, একজন ডিআইজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার। এ জন্য বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজনকে তুলে নিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের দিয়ে জঙ্গি নাটক মঞ্চায়ন হতে পারে।’ এসময় তিনি আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পরিকল্পনায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সরকার জঙ্গি নাটক করে স্বার্থসিদ্ধি করেছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তেও একই নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে পারে। আমি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বলব, আপনারা আওয়ামী লীগের কোনো নাটককে বিশ্বাস করবেন না।’ একতরফা সাজানো ডামি নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার হতে এবং বাংলাদেশের জনগণের একান্ত চাওয়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান রিজভী।   রিজভী  অভিযোগ করে বলেন, ‘দলদাস নির্বাচন কমিশন (ইসি) শেখ হাসিনার পাঠানো আসন বণ্টনের তালিকায় সিলমোহর দেওয়ার জন্য একতরফা নির্বাচন নাটকের আয়োজন করেছে। এই নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনারদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণ রীতিমতো হাস্যকর। তাঁরা প্রায়ই বিএনপিকেও হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন।’ নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের এক জবাবের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন,‘‘তিনি (ইসি আনিছুর রহমান) সাধুসন্ত হওয়ার অভিনয় করছেন। কেন তালিকা আমি দেব। সরকারকে বলেন, আপনার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেন, পেয়ে যাবেন।’ এ প্রসঙ্গে  রিজভী আরও বলেন, ‘‘আপনাদের নেতা ওবায়দুল কাদের আগেই ঘোষণা করেছেন, ‘১৮৯৬ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনের ফাইনাল খেলায় অংশ নিচ্ছে। ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে। সরকার জানে কত পার্সেন্ট ভোট কাস্ট করবে। আপনাদের কাজ হলো ঘোষণা করা।’ কে এই লেন্দুপ দরজি? ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় গণভোটে সিকিমের জনগণ ভারতে যোগদানের বিরুদ্ধে রায় দেন। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর সিকিমের গুরুত্ব বেড়ে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সিকিম দখল করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি কাজে লাগান সিকিমের রাজনীতিবিদ লেন্দুপ দর্জিকে। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই সিকিমে সাধারণ নির্বাচনে লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বাধীন  সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। দলটি আইন পরিষদের ৩২টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসন পায়। দলের প্রধান কাজী লেন্দুপ দর্জি হন প্রধানমন্ত্রী। ভারত এটাই চেয়েছিল। কারণ কাজী লেন্দুপ দর্জি তো তাদেরই লোক। এই নির্বাচনের পর সিকিমকে ভারতকে অঙ্গীভূত করার প্রস্তুতি নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্য একটা বৈধতার প্রলেপ দরকার। সেটা করে দেন কাজী লেন্দুপ দর্জি। ১৯৭৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি বললেন, ভারতের দুই পরিষদ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সিকিমের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করেও সিকিমকে আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদায় রাখা যেতে পারে। লেন্দুপ দর্জি যেহেতু ৩২টি আসনের ৩১টি আসনের নেতা, তার মতামতই তো সিকিম জনগণের মতামত। সুযোগটা হাতছাড়া করল না ভারত। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫০ সালের চুক্তি, যাতে সিকিমকে ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়, তা বাতিল করল। সিকিমকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার বিল আনা হলো পার্লামেন্টে। আর এভাবেই ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয় সিকিম।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নির্বাচনে | দিল্লি | প্রকাশ্য | প্রভাব | খাটাচ্ছে | জনগণ | উদ্বিগ্ন | রিজভী