শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় ৬ মাসের সাজা বাতিল চেয়ে শ্রম আপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল আবেদন করবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন। এ জন্য সকাল ১০টার পর শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হবেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট আপিল ট্রাইব্যুনালে শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার ৬ মাসের দণ্ড দিয়ে রায় বাতিল ও সাজা থেকে খালাস দিতে ২৫ যুক্তিতে তাদের আপিল আবেদন করবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তাদের আইনজীবী।
আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, ২৫ যুক্তি তুলে ধরে রোববার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার রায় বাতিল চেয়ে আপিল আবেদন করবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মামলায় জামিনও চাইবেন তিনি। এদিন আইনজীবী ও ড. ইউনুসসহ দণ্ডিত চার আসামি গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান উপস্থিত হবেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন আরো জানান, গত ২৪ জানুয়ারি দেশে ফিরেছেন ড. ইউনূস। খালাস চেয়ে আপিল করবেন আজ (২৮ জানুয়ারি)। একই দিন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে তিনিসহ চার আসামি আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনও চাইবেন তারা।
এর আগে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায়ে গ্রামীণ টেলিকমের সব শ্রমিককে তাদের ন্যায্য পাওনা ৩০ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।
শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।
চলতি বছরের শুরুর দিন ১ জানুয়ারি রায়ের জন্য ধার্য দিনে ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন।
এই সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে যেসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তা বিধি সংশোধন করে সেসব সুবিধা প্রদান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু হয়। রায় শোনার জন্য ১টা ৪০ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তিনি আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন।
এদিন রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বর ও আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। খবর সংগ্রহের জন্য ভিড় জমান দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান ও সৈয়দ হায়দার আলী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও রায় শুনতে বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীরা আদালতে উপস্থিত হন। আদালতের এজলাস কক্ষ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ।
এদিকে রায় ঘোষণার পর ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, তারা ন্যায়বিচার পাননি। এ বিষয়ে ক্লায়েন্টেদের সঙ্গে কথা বলে আপিলের সিদ্ধান্ত নেবেন।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আসামিরা শ্রম আইন না মেনে নিজস্ব আইনে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করেছিলেন এজন্যে তারা শাস্তি পেয়েছেন। রায় ঘোষণার পর আসামিদের আপিলের শর্তে জামিনও মঞ্জুর করেছেন আদালত।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় ড. ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে বিবাদী করা হয়।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।
মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয় না।