মনে আছে সেই বিখ্যাত অ্যানিমেশন সিনেমা র্যাটাটুলির কথা, যেখানে শেফ ছিল একটা ছোট্ট ইঁদুর! নিজের বুদ্ধি লাগিয়ে নানারকম ফিউশন খাবার তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিত সে। ‘কম্বিনেশন ফুড’ যে সুস্বাদু হতে পারে তা শিখিয়েছিল সেই ছোট্ট রাঁধুনী ইঁদুর। এখন বিশ্বজুড়েই এই কম্বিনেশন ফুডের দিকে ঝোঁক বেড়েছে নতুন প্রজন্মের। এক খাবারের সঙ্গে অন্য খাবার মিশিয়ে নিত্যনতুন এক্সপেরিমেন্ট চলছেই। আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে ‘র্যাট স্ন্যাকিং’ নামক কথাটি। ডায়েটিশিয়ানদের মধ্যে এখন খুব চালু কথা এই র্যাট স্ন্যাকিং। অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজনই নাকি র্যাট স্ন্যাকিং অভ্যাস করার চেষ্টা করছেন।
কী এই র্যাট স্ন্যাকিং?
ইঁদুরের মতো খাওয়ার অভ্যাস। বোঝা গেল না তো? পুষ্টিবিদরা বুঝিয়ে বলেছেন, ইঁদুর একবারে অনেকটা খায় না। বারে বারে অল্প অল্প করে খায়। আর তাদের খাওয়ার ধরনও অদ্ভুত। নানা জিনিস একসঙ্গে খায়। তাদের ছোট ছোট মিলকেই র্যাট স্ন্যাকিং বলা হচ্ছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, র্যাট স্ন্যাকিং মানে ছোট ছোট মিল এবং কম্বিনেশন ফুড। যদি সঠিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
র্যাট স্ন্যাকিং নিয়ে অনেক ভুল ধারণাও আছে। অনেকেই ভাবছেন র্যাট স্ন্যাকিং মানে যা খুশি একসঙ্গে খেয়ে ফেলা। এটা কিন্তু মোটেও নয়। ইঁদুর আর মানুষের বিপাক ক্রিয়ার হার এক নয়। কথাটা র্যাট স্ন্যাকিং ঠিকই, কিন্তু আসলে বোঝানো হয়েছে একবারে ভারী খাবার না খেয়ে সারাদিনের ডায়েটকে ছোট ছোট মিলে ভেঙে নেয়া এবং পুষ্টিকর কম্বিনেশন ফুড খাওয়ার চেষ্টা করা। কম্বিনেশন মানা নানা ধরনের জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস নয়, বরং র্যাটাটুলির সেই রাঁধুনী ইঁদুর যেমন চিজের সঙ্গে টাটকা ফল মিশিয়ে পুষ্টিকর কম্বিনেশন তৈরি করেছিল, ঠিক সেইরকম।
ডায়েটিশিয়ানরা বলছেন, আজকাল ‘অড কম্বিনেশন’ অনেকেই ট্রাই করছেন। যেমন ফুচকার ভেতর বিরিয়ানি বা চায়ের সঙ্গে রসগোল্লা। এমন কম্বিনেশন মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কম্বিনেশন ফুড হতে হবে স্বাস্থ্যকর যেমন-- কলা ও ইয়োগার্ট কিন্তু উপকারি কম্বিনেশন। দুটো খাবারের মধ্যেই থাকে প্রোবায়োটিক। তাই কলা ও ইয়োগার্ট এক সঙ্গে খেলে প্রোবায়োটিকের মিশ্রণ শরীরে পৌঁছায়। পটাশিয়াম আর প্রোটিন পুষ্টি জোগাতে ও পেশীর স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। আবার স্ট্রবেরি ও পালং শাকের কম্বিনেশন বেশ ভাল। স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে এবং পালং শাক আয়রনের আধার। যদি শরীরে আয়রনের অভাব থাকে তা হলে এই কম্বিনেশন খুবই কার্যকরী। আবার বেরির সঙ্গে ওটমিল খাওয়া যেতে পারে। বেরিতে থাকে ফাইবার, ভিটামিন সি ও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ওটমিল আয়রন, ভিটামিন বি ও আয়রন। ব্রেকফাস্টে ওটমিলের সঙ্গে ব্লুবেরি খাওয়া খুবই উপকারি।
র্যাট স্ন্যাকিং করতে হলে খাওয়ার সময়ের উপরেও জোর দিতে হবে। যখন তখন স্ন্যাকস নয়, বরং সময় ধরে খাওয়া। যদি খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো হয় তা হলে সারাদিনের কখনওই এনার্জিতে ঘাটতি পড়বে না। ঠিক সময়ে না খেলেই দেখবেন বিকেলের দিকে ক্লান্তি লাগছে, খিদে পাচ্ছে। হুট করে ভাজাভুজি বা মিষ্টি কিছু একটা খেয়ে ফেললে সমস্যার সমাধান হবে না – চিনির কার্যকারিতা কমে গেলেই আবার খিদে পাবে। তাই সকালের নাস্তার পর এবং বিকেলের দিকে এমন কোনও স্ন্যাক্সের বন্দোবস্ত রাখুন যা পেট ভরায়, কিন্তু বাড়তি ক্যালোরির বোঝা চাপায় না। ঘুম থেকে ওঠার দু’ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট খান, রাতে শুতে যাওয়ার দু’ ঘণ্টা আগে খান ডিনার। নিয়ম মেনে চললে ঘুম ভালো হবে, নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তের শর্করাও।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনইঁদুর | শিখাবে | স্ন্যাকস | খাওয়া