রাজশাহীর দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মানবিকতায় আপন ঠিকানায় ফিরেছে শিশু হাসিবুল ইসলাম (১২)। গেলো শনিবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় শিশুকে তার পিতা শাহ জামালের কাছে হস্তান্তর করেন ওসি নাজমুল হক। এর আগে সেদিন দুপুরের দিকে ভবঘুরের মতো দুর্গাপুর থানা মোড়ে ঘুরছিল শিশু হাসিবুল ইসলাম। এসময় দুর্গাপুর থানার ওসি নাজমুল হকের দৃষ্টি এড়ায়নি শিশু হাসিবুল।
জানা যায়, ভবঘুরের মত থানার সামনে ঘুরতে দেখে ওসি নাজমুল তাকে ডেকে নিয়ে খোঁজ খবর নেন এবং দুপুরের খাবার খাইয়ে নিজের হেফাজতে রাখেন। পরে শিশু হাসিবুলের কাছ থেকে তার স্বজনদের ঠিকানা সংগ্রহ করে শনিবার সন্ধ্যার দিকে তার বাবার কাছে তাকে হস্তান্তর করেন। ওসির এমন মানবিকতায় থানা পুলিশের পাশাপাশি মুগ্ধ হন ওই শিশুর পরিবার ও এলাকাবাসী।
দুর্গাপুর থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, শনিবার দুপুরের দিকে থানার প্রধান ফটকের সামনে শিশু হাসিবুলকে ঘুরতে দেখে তাকে ডেকে নেন। পরে তার কাছে এভাবে ঘুরাঘুরির কারন জানতে চান। এসময় শিশু হাসিবুল তাকে জানায়, তার বাবার বাড়ি উপজেলার গৌরিহার গ্রামে। বাবার নাম শাহজামাল। হাসিবুলের জন্মের ৪ বছর পর পারিবারিক কলহের জেরে হাসিবুলের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ৪ বছর বয়সী হাসিবুলকে নিয়ে হাসিবুলের মা হনুফা বেগম রাজশাহী নগরীর বেলপুকুর থানার ফাটাপুকুরিয়া গ্রামে পিতা মহসিন হোসেনের বাড়ি চলে যান। এদিকে হাসিবুলের বাবা শাহজামাল রংপুরে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন।
অন্যদিকে, মা হানুফা বেগম শিশু হাসিবুলকে নানার বাড়ি রেখে অন্যত্র বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে চলে যান। তারপর থেকে হাসিবুল নানার বাড়িতেই থাকতো। নানা মহসীন হোসেন হতদরিদ্র হওয়ায় খোরপোষ মেটাতে ব্যর্থ হয়ে হাসিবুলকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। হাসিবুল নানার বাড়ি আশ্রয় হারিয়ে বাবার বাড়ি গৌরিহার গ্রামে যায়। কিন্তু সেখানে দাদা-দাদী ও চাচারা তার দায়-দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ওসি নাজমুল হক বলেন, অন্য শিশুদের মতো যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বাবা-মায়ের কাছে শত বায়নার ফিরিস্তি তুলে ধরার কথা। অথচ হাসিবুল ইসলাম বাবা-মায়ের স্নেহের পরশ বঞ্চিত হয়ে ভবঘুরে হয়ে পড়ে। মানবিকতার জায়গা থেকেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
