মহান আল্লাহ তায়ালা কোনো কোনো সময় ও স্থানকে অন্যের উপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। এর হেকমত একমাত্র তিনিই জানেন। তিনি রমজান মাসকে অন্যান্য মাসের তুলনায় অগ্রধিকার দিয়েছেন। এটা যেন নক্ষত্রের মধ্যে সূর্যের মতো। এ মাসে রয়েছে অনেক ফজিলত ও নানা বৈশিষ্ট্য। এ মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র রমজানকে বলা হয় মুমিনের প্রশিক্ষণকাল। এই মাসে মুমিন বান্দা পুণ্যময় জীবনের ট্রেনিং নেন এবং অন্য মাসগুলোতে সে অনুযায়ী পরিচালিত হন। একজন মুমিন রোজার দিন ২৪ ঘণ্টা কীভাবে কাটাবেন তার একটি নমুনা এখানে উপস্থাপন করা হলো—
সকাল
১. ফজরের আজানের উত্তর দেয়া।
২. অজুতে মিসওয়াক করা (সব নামাজের সময়)।
৩. ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করা।
৪. প্রথম কাতারে ইমামের ডানদিকে বসে নামাজের জন্য অপেক্ষা করা (ডানদিকে জায়গা না থাকলে বাম দিকে)।
৫. জামাআতের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ইস্তেগফার, দোয়া ইত্যাদি পড়া।
৬. তাকবিরে তাহরিমাসহ অত্যন্ত ভয়-ভীতি, বিনয়, নম্রতা ও একাগ্রতার সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করা।
৭. নামাজ শেষ করার পর যথাস্থানে বসে পরবর্তী দোয়া ও জিকিরগুলো করা।
৮. ইশরাক পড়া।
৯. দান-সদকা করা।
দুপুর
১. হালাল জীবিকার অনুসন্ধান করা।
২. চাকরি বা ব্যবসায় যে যার দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। চাকরির ক্ষেত্রে মালিকের হক আদায় এবং ব্যবসায় সত্যবাদিতা ও সততা বজায় রাখা।
৩. পুরোদিনে কমপক্ষে ১ পারা কোরআন পড়া। পাশাপাশি সাধ্যমতো তরজমা, তাফসির ও শানেনুজুল পড়া।
৪. আমলের নিয়তে প্রতিদিন কমপক্ষে ২/৩টি হাদিস অনুবাদসহ পড়া।
৫. পরিবার আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। তার খেদমত করা। তার জন্য দোয়া করা এবং তাকে সান্ত্বনা দেওয়া।
৬. কেউ মারা গেলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা। সম্ভব হলে দাফন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা।
৭. নিকটাত্মীয় বা দ্বীনি ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে দ্বীনি আলোচনা ও নসিহত করা।
৮. সবসময় হাসিমুখে, সুন্দর ও মিষ্টিভাষায় কথা বলা, বিনয় ও নম্রতা দেখানো। এসবে রয়েছে সদকার সওয়াব।
৯. জোহরের আজানের উত্তর দেওয়া, নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া ও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।
১০. সুন্নত নামাজে যত্নশীল হওয়া (জোহরের আগে চার রাকাত এবং পরে দুই দুই করে ৪ রাকাত পড়া)।
১১. পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা।
বিকাল
১. আছরের আজানের উত্তর দেওয়া এবং জামায়াতে নামাজ আদায় করা।
২. দ্বীনি মজলিস ও দরসে অংশ নেওয়া। উদ্দেশ্য হবে নেক কাজের নিয়তে সাদেকিন বা সত্যবাদীদের সংস্পর্শে কিছু সময় অতিবাহিত করা। এক্ষেত্রে মুসলমানদের সম্মান রক্ষা ও কোনো মুমিনের গীবত করা হচ্ছে কি না সচেতন থাকতে হবে (অনুপস্থিত ব্যক্তির অপছন্দনীয় বিষয়ে সত্য বললেও গীবত)। এরকম হতে দেখলে দ্রুত মজলিস ত্যাগ করা জরুরি। এছাড়াও এমন কোনো মজলিসে বসা যাবে না, যেখানে কোরআন ও সহিহ সুন্নাহকে অবহেলা করা হয়।
৩. কোরআন তেলাওয়াত করা।
৪. ইফতার সামনে নিয়ে বসা এবং সময় হওয়ার পর ইফতার করা।
৫. ইফতারের আগে-পরে মাসনুন দোয়াগুলোর উপর আমল করা।
৬. সাদাসিধে ইফতার করা
রাত
১. মাগরিবের আজানের উত্তর দেওয়া ও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়।
২. সন্ধ্যার মাসনুন জিকির ও তাসবিহ পাঠ।
৩. পরিবারে দ্বীনচর্চা করা।
৪. এশার আজানের উত্তর দেওয়া এবং জামাতে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করা।
৫. এশার সুন্নত নামাজ পড়া।
৬. জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করা।
৭. সারাদিনের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তেগফার করা এবং ভালো কাজগুলো জন্য শুকরিয়া আদায় করা।
৮. পরবর্তী দিনটিতে যেন আমলের উন্নতি হয়, সেজন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।
৯. যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া।
১০. ঘুমানোর সময় সুন্নতের ওপর আমল যেমন নির্দিষ্ট দোয়া ও সুরাগুলো পাঠ, মিসওয়াক করা এবং অজুসহ ঘুমানো।
১১. ঘুম থেকে ওঠে দোয়া পড়া এবং অজু করে তাহাজ্জুদ আদায় ও সেহেরি খাওয়া।
উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলা পুরো রমজানে আমাদের সবাইকে সুন্নতের ওপর অবিচল তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালীন নাজাত দান করুন। আমিন।