দিল্লির অধীনস্থ হওয়ার জন্য কি আমরা এই যুদ্ধ (মুক্তিযুদ্ধ) করেছি? কখনোই না। বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ কখনো এ ধরনের গোলামি মেনে নেবে না। ভারতের আনুগত্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ কার্যালয়ের নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘অরক্ষিত স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিহীন বিপন্ন বাংলাদেশ: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
তিনি বলেন, আজকে একটি রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু যে পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতি বিষয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা এটা বর্তমান শাসক দলের অভ্যাস। তাদের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) যখন বিপদে পড়ে তখন বলেন যে, দিল্লি আছে আমরা আছি। এ ধরনের কথা বলতে লজ্জাবোধও তাদের হয় না। দিল্লী থাকলে এ সরকার আছে। কত খানি নির্লজ্জ প্রতিবেশী দেশের আশ্রয়ে আনুগত্য স্বীকার করে যাচ্ছে। আমরা কি এজন্য যুদ্ধ করেছি? রাওয়ালপিন্ডি থেকে সরে এসে আমরা কি দিল্লির অধীনস্থ হওয়ার জন্যই যুদ্ধ করেছি? কখনই না। বাংলাদেশের স্বাধীন চেতা মানুষ কখনই এ ধরনের গোলামী মেনে নেবে না।’
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হাফিজ বলেন, ‘বিএনপি পথ নির্দেশ করেছে তারেক রহমান… মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ (মহাসচিব) শীর্ষ স্থানীয় নেতারা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করার জন্য, স্বাধীনতার লক্ষ্যগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির সংগ্রাম জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার সংগ্রাম, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।’
‘আমরা দেশবাসীর জন্য সংগ্রাম করছি… এ সংগ্রামে দেশ অবশ্যই আমাদের জয়ী হতে হবে, এ সংগ্রামে চুল-দাঁড়ি পেকে গেলেও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিতে হবে… আপনারা দেশের আদর্শ। আপনাদের দিকে তাকিয়ে একজন তরুণ অনুপ্রাণিত হবে। যাদের আজকে চুল-দাঁড়ি সাদা হয়ে গেছে ১৭/১৮ বছর বয়সে ছিল সাবমেশিন গান- সেভেন বন্ড ৬২ চাইনিজ রাইফেল… তিনি বীরবিক্রমে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করেছেন… আজকে এ বৃদ্ধকে দেখে অনেকে মনে করতে পারবে না কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের অনুপ্রাণিত করে যেতে হবে।’
দেশের বর্তমান অবস্থায় দেখে আক্ষেপ করে মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুঃখ লাগে ৮০ বছর বয়সে গাড়ি পোড়ানো মামলায় এ স্বাধীনতার মাসে জেলে যেতে হলো। আমি আশা করি, এ জন্যে তারা (ক্ষমতাসীনরা) একদিন লজ্জিত হবে… মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে অসম্মানের। অপরাধ করলে নিশ্চয়ই সাজা হবে। কিন্তু আমি এবং আলতাফ হোসেন চৌধুরী (বিমান বাহিনী প্রধান) জনতা ব্যাংকের গাড়ি পোড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিন তো কোনো ঘটনাই ঘটেনি ঢাকা শহরে।’
‘ঢাকার জন্য দিল্লি আছি তো আমরা আছি। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা এখন বৃদ্ধ বয়সে… আগামী দিনগুলোতে আমরা-আপনারা আগামী প্রজন্মকে দীক্ষা দিয়ে যাবো দেশকে ভালোবাসে… দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার মন-মানসিকতা অর্জন করো। এটাই হলো আজকের দিনে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা… আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছি এ সংগ্রাম ব্যর্থ হতে পারে না। অবশ্যই দুঃশাসনের অবসান হবেই। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্ম তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।”
‘দেশে যা কিছু করে ভালো-খারাপ সব কিছু বিএনপি। আমরা ক্ষমতায় নেই এত বছর… এই জিনিসপত্রের দাম নাকি বিএনপি বাড়াচ্ছে তাদের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য। আমিও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের শেষ ছয় মাস। চেষ্টা করেছি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য… ওই সময় বাজার দর মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমরা জনগণকে খেজুরের বদলে বরই খাওয়ার উপদেশ দিইনি। আজকে মানুষ দিশেহারা দ্রব্যমূল্যের অবস্থায়।’
এএম/