দেশজুড়ে

আড়তগুলোতে তরমুজের পাহাড়, নেই ক্রেতা

আড়তগুলোতে তরমুজের পাহাড়, নেই ক্রেতা
মৌসুমের শুরুতে অপরিপক্ব তরমুজ নিয়ে আসে চট্টগ্রামের বাজারে। যা বেশি দামে বিক্রি করায় ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে তরমুজ বয়কটের ডাক দেয় নেটিজেনরা। পরে ক্রমেই বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমতে থাকে রসালো ফলটির দাম। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের আড়তগুলোতে জমে উঠেছে তরমুজের পাহাড়। হাটবাজার, অলিগলির ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে ফলের দোকানে তরমুজ আর তরমুজ। তবে হাসি নেই তরমুজ ব্যবসায়ীদের মুখে। এমনকি চাষির মুখেও নেই হাসি! কারণ বাজারে তরমুজ খাওয়ার মতো এখন ক্রেতা নেই। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকালে নগরীর চিটাগাং ফার্ম, আল্লাহর অলি হাফেজ নগর ফার্ম, মদিনা ফার্ম, শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, আমানত ফার্ম, ঢাকা ফার্ম, বোয়ালখালী ফার্ম, নোয়াখালী ফার্ম, পরান ট্রেডার্স, ইসলাম ট্রেডার্স, রহমান ট্রেডার্স, আল মক্কা ফার্ম, নাজিম ট্রেডার্স, আল্লার দান ফার্ম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব আড়তে নোয়াখালী, রাঙামাটি, ভোলা, বরিশাল, খুলনা থেকে নিয়মিত তরমুজ আসছে। এদিন সকালে ফিরিঙ্গিবাজারের আড়তে সুবর্ণচরের চাষি আকরাম (৫৫)  বলেন, ১৫ হাজার টাকায় কাভার্ডভ্যান ভাড়া দিয়ে আড়াই হাজার ছোট বড় তরমুজ আড়তে এনেছিলেন। জায়গা খালি না থাকায় আড়তের সামনেই তরমুজ বোঝাই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে বেশি দামের আশায় কিছু চাষি অপরিপক্ব তরমুজ বাজারজাত করেছিল। আকারে বড় হলেও ভেতরে ছিল সাদা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবার তরমুজের বাজারে। তবে এখন বেশিরভাগ তরমুজই পরিপক্ব এবং ভেতরে লাল ও মিষ্টি। তিনি আরও বলেন, আট কানি জমিতে আমি তরমুজ চাষ করেছি এবার। গোল হরি বীজ ৬-৭ হাজার টাকা, জাম্বু বীজ ২ হাজার ৬০০ টাকা, বাংলালিংক তরমুজের বীজের প্যাকেট ১২০০-২০০০ হাজার টাকা। মোটর দিয়ে দুইবার পানি সেচ দিছি। কলের লাঙল দিয়ে জমি চাষ দিয়েছি। ৬০০ টাকা দরে দিনমজুর দিয়ে জমিতে চার হাত পর পর বীজের গর্ত করেছি। এক গর্তে তিনটি করে বীজ দিয়েছি। কানিপ্রতি ২০ হাজার টাকা ওষুধ খরচ গেছে। সার খরচ গেছে প্রচুর। এখন তরমুজ তোলার জন্য ৬০০ টাকা দামের দিনমজুর দিছি। তাদের এক বেলা খাওয়াতেও হয়। ১৫ হাজার টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে প্রথমবার আড়তে আনলাম তরমুজ। আশানুরূপ দাম নেই। ক্রেতা কম। চাষি আকরাম বলেন, তরমুজের আকার ভেদে ১ থেকে ৪ নম্বর ভাগ করা হয়। ১০০টি বড় তরমুজ ১৬-২০ হাজার টাকা। সবচেয়ে ছোট তরমুজ প্রতিশ ৩ হাজার টাকা। আড়তদারের কমিশন ১০ শতাংশ। লেবারদের দিতে হয় তরমুজ প্রতি ৩ টাকা। সব খরচ বাদ দিলে চাষের খরচও হয় না। অভিজ্ঞ এ তরমুজ চাষি বলেন, এবার সুবর্ণচরে তরমুজের ফলনও ভালো হয়নি। এক কানি ক্ষেতের তরমুজ আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু জাহাইজ্জাচরে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এক কানি ৫ লাখ টাকাও বিক্রি হয়েছে। মূলত যারা কানি হিসেবে তরমুজ কিনে তারা ছোট বড় পরিপক্ব, অপরিপক্ব সব তরমুজ তুলে ফেলে। তাই কোনোটা সাদা থেকে যায়। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারের আড়ত ঢাকা ফার্মের ব্যবস্থাপক তানজিদ বলেন, ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতারা যেমন ভালো নেই, তেমনি তরমুজ চাষিরা ভালো নেই। কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, খরা, পোকা, শিলাবৃষ্টি, পরিবহন সমস্যাসহ নানা প্রতিকূলতা জয় করে তরমুজ ফলান তারা। কিন্তু ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অনেকে দাদন নিয়ে যান, আর ফেরেন না।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন আড়তগুলোতে | তরমুজের | পাহাড় | নেই | ক্রেতা