সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এ তালিকায় পঞ্চগড়ের তিনটি উপজেলায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে তেঁতুলিয়ার ৬টি, আটোয়ারির ৩টি ও দেবীগঞ্জ উপজেলার ১টি বিদ্যালয় রয়েছে।
বুধবার (৩ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলে পঞ্চগড়ের ১০টি সরকারি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। তারা বলছেন, তাদের এলাকায় স্থাপিত এসব বিদ্যালয়ের নাম এলাকার ঐতিহ্য ধারণ করছে। নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়নি বলে মনে করছেন তারা।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে সমালোচনা চলছে। নতুন হওয়া নামগুলোও পরিবর্তন দাবি করছেন অনেকে। তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নতুন নাম পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষা বিভাগ।
মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোর নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ সংবলিত। যা শিশুর রুচি, মনন, বোধ ও পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার অন্তরায়। তাই মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে সুন্দর, রুচিশীল, শ্রুতিমধুর এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম পরিবর্তন হওয়া বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, তেঁতুলিয়া উপজেলার মাথাফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার বর্তমান নামকরণ করা হয়েছে মাধবীলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেদিয়াগছ আব্দুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম রজনীগন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোদা ময়নাগুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম দোলনচাঁপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুলাসুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম অপরাজিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম মহানন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম আটোয়ারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম মির্জাপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তন করে বর্তমানে নতুন নামকরণ করা হয়েছে পূর্ব সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেবীগঞ্জ উপজেলার পীড়াফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম মল্লিকাদহ সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগরের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মোখলেসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তেঁতুলিয়ার মাথাফাটা গ্রামটি যুগ যুগ ধরে এই নামেই পরিচিত হয়ে এসেছে। এখানকার জমির মৌজারও নামও মাথাফাটা। নাম পরিবর্তন করে যে নাম দেয়া হয়েছে তা আমাদের কাছে যথাযথ মনে হয়নি।
একই উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ মোকতারুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ের পাঁচগড়ের একটি গড় হচ্ছে দেবনগড়। এ গড়ের কারণে এলাকাটির নিজস্ব পরিচিতি ও খ্যাতি রয়েছে। ১৯২১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। তখন থেকেই এই নামে পরিচিত হয়ে আসছে। ভজনপুর দেবনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামটিতে ভজনপুর ও দেবনগড় দুই এলাকার নাম হওয়ায় ভজনপুর শব্দটি বাদ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন দেখছি পুরোটা বাদ দিয়ে নাম দেয়া হয়েছে হাসনাহেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর। নামটি পরিবর্তন করায় বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি ব্যথিত।
পঞ্চগড়ের শিক্ষাবিদ ও সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক হাসনুর রশিদ বাবু বলেন, এই নামগুলো এলাকায় যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। এছাড়া এটি স্থানীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন যুক্তিযুক্ত হয়নি। তাই পূর্বের নামগুলো বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।
তবে তেঁতুলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানালেন এ নামগুলো সবার সম্মতিক্রমে হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম শ্রুতিকটু বা নেতিবাচক রয়েছে, সেসব স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক, সভাপতিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। তাই রেজুলেশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়। এতে তেঁতুলিয়ার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বের নাম বাদ দিয়ে নতুন নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়। তাই বিদ্যালয়গুলোর ফুল ও নদীর নামে নতুন নামকরণ করা হয়েছে। যাতে করে এ নামগুলো শিশুদের কাছে শ্রুতিমধুর ও সুন্দর হয়। আসলে একটি ভালো কাজ হলে সব সময়ই এর বিরোধিতা থাকে। এখন সেটিই হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুজ জামান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের ২৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার। সেখানে পঞ্চগড়ে ১০টি বিদ্যালয় রয়েছে। এ নামগুলো উপজেলা ও জেলা কমিটির মাধ্যমেই পরিবর্তন করে শ্রুতিমধুর করে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন নামকরণ করা হয়েছে। তাই এখন নাম পরিবর্তনের সুযোগ নেই।