পাবনার নির্বাচন অফিসগুলোতে আইডি কার্ড সংশোধনে চরম ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। জেলার বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসে গেলে বছরের পর পর ঘুরতে হয়। সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে, সংশোধন আবেদন করলেও অর্থ ছাড়া মিলেনা সেবা। নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন করাসহ সকল কাজেই গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। টাকা না দিলে সমস্যা সমাধানে ঘুড়তে হয় বছরের পর বছর। আবার টাকা দিলেই মেলে সমাধান।
সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এমনকি পাবনা জেলা নির্বাচন অফিসের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আবেদন প্রক্রিয়া সঠিক থাকলেও বছরের পর বছর ঘুরতে হয় নির্বাচন অফিসে। এমনকি সরাসরি অর্থের অফার করে অফিসের কর্মচারীরা। অর্থ না দিলেই কোন প্রকার সমাধান মিলেনা।
পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি এলাকার ভুক্তভোগী রেশমা খাতুন বলেন, এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। একারণে নিজের ভোটার আইডি কার্ডে স্বামীর নামের পরিবর্তে বাবার নাম যুক্ত করতে যান ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিসে। নাম পরিবর্তন করতে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন সেখানকার অফিস সহায়ক ও নাম জানা অফিসের দুইজন মহিলা কর্মচারী। তিনি আরও জানান, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তাকে আরও বলেন, পাবনা জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে এর চেয়ে বেশি টাকা লাগবে। টাকা ছাড়া সংশোধন হবে না।
রিপোন হোসেন নামে একজন জানান, আইডি কার্ডের বয়স সংশোধনের জন্য ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিসের শওকত আলী নামের এক কর্মচারী তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন, কিছু টাকা কম নিতে বললে অফিসের কর্মচারী বলেন, উপজেলা নির্বাচন অফিসারকেই সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।
ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া গ্রামের সুচিত্রা রাণী কুন্ডু বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমি আমার আইডি কার্ডের নাম ভুল থাকার কারণে সংশোধন করার জন্য ৮ বছর ধরে ঘুরছি, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাচন অফিসে, আইডি কার্ড এর নাম ভুল সংশোধন কোথায় গেলে হবে পরিষ্কারভাবে তারা কিছু বলেনা। এই অফিসে টাকা ছাড়া কোন কাজ তারা ধরে না।
বাবুল নামে এক ভুক্তভোগী জানান, বয়স সংশোধনের জন্য আবেদন করে ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিস এবং পাবনা জেলা নির্বাচন অফিস ঘুরতে ঘুরতে এক বছর হয়ে গেল। ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিসে ২৫ হাজার টাকা চেয়েছিল কিন্তু আমি দেইনি। এরপর পাবনা জেলা নির্বাচন অফিসের পিয়ন আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা দিলে আইডি কার্ড সংশোধন করে দেয়ার কথা বলেন, সেটাও আমি দেইনি। এর জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার রুমে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। একের পর এক ঘুড়িয়েই গেছে।
এসব হয়রানির অভিযোগ এই উপজেলার শতাধিক মানুষের। টাকা না দিলে কোনো কাজ করেন না ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তা। নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন করাসহ সকল কাজেই গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। ওই অফিসের অফিস সহায়ক শওকত আলীর হাত দিয়ে নেয়া হয় এসব অতিরিক্ত টাকা। টাকা নিয়ে করে দেয়া হয় সব ধরণের কাজ।
অভিযোগ রয়েছে ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিসার আশরাফুল হক প্রতিটি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সর্বনিম্ন দশ হাজার টাকা করে গ্রহণ করেন। আর বাকী টাকা ভাগ করে নেন অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা আর ভাগ পান জেলা অফিসের কর্মকর্তারাও।
এ বিষয়ে জানতে চারদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাচন অফিসার আশরাফুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদী নির্বাচন অফিসের সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার রায় বলেন, অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নামে যদি অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক শওকত আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা।
এদিকে কোন উপায় না পেয়ে জেলা নির্বাচন অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। আর দায়সারা জবাব নির্বাচন কর্মকর্তার।
পাবনা জেলা নির্বাচন অফিসের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার, মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, এ সকল অভিযোগ সঠিক নয়, সবকিছু মিথ্যা । তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ গ্রহণ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে এড়িয়ে যান।