সৌদি আরবের মক্কার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাতের ময়দানে পবিত্র হজের খুতবা চলছে। শনিবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আরাফাত ময়দানের নামিরাহ মসজিদ থেকে হজের খুতবা পাঠ শুরু করেন পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের আল মুয়াইকিলি।
আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ ৯ জিলহজ। এটি পবিত্র ‘আরাফাত দিবস’ হিসেবেও পরিচিত। ঐতিহাসিক এই ময়দানে দিনব্যাপী ইবাদত বন্দেগি আর দোয়া মোনাজাতে মশগুল হাজিরা। এদিন সকাল থেকে কণ্ঠে তাদের সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।
সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ শনিবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা করেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।
গতকাল শুক্রবার (৮ জিলহজ) মক্কা থেকে পাঁচ থেকে আট কিলোমিটার পূর্বে মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করেছেন হজযাত্রীরা। সেখানে ইবাদত বন্দেগিতে দিন ও রাত পার করেছেন তারা। সেখান থেকে আজ ভোরে তারা আল্লাহকে কাছে পাওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষায় ছুটে এসেছেন আরাফাতের ময়দানে। মুহুর্মুহু উচ্চারণ করছেন—‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল্মুল্ক্, লা শারিকা লাকা’। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
পবিত্র হজে এবার খুতবা দেয়ার আগে আরাফাতের ময়দানের নামিরাহ মসজিদে জোহর নামাজের বিশাল জামাতে ইমামতি করেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের আল মুয়াইকিলি।
মসজিদুল হারামের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ১৯৬৯ সালের ৭ জানুয়ারি পবিত্র মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন ড. মাহের আল মুয়াইকিলি। হিফজ শেষ করার পর মদিনার টিচার্স কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে গণিতে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পর, একই বিষয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন এই ইমাম। ১৪২৫ হিজরিতে (২০০৪ সাল) পবিত্র মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ্ অনুষদ থেকে মাহের বিন হামাদ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১২ সালে ইমাম সিরাজি রহ. রচিত শাফেয়ী মাজহাবের কিতাব ‘তুহফাতুন নাবিহ শারহুত তানবিহ’র ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
পবিত্র কোরআনের অসাধারণ তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শায়খ মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বল আল মুয়াইকিলি। মাহের বিন হামাদের কর্মজীবন শুরু হয় উম্মুল কুরার জুডিশিয়াল স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। ১৪২৬-২৭ হিজরির (২০০৫-২০০৬ সাল) পবিত্র রমজানে মসজিদে নববির সহকারী ইমামের দায়িত্ব পান তিনি। পরে ১৪২৮ হিজরির (২০০৭ সাল) রমজানে মসজিদুল হারামের তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের ইমাম মনোনীত হন। এরপর ওই বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদুল হারামের স্থায়ী ইমামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এ বছর হজের আরবি খুতবাটি বাংলাসহ ৫০টি ভাষায় শোনা যাচ্ছে। বাংলায় খুতবা অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অবস্থান করা চার বাংলাদেশি—মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কি ও মুবিনুর রহমান ফারুক এবং জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নাজমুস সাকিব।
বাংলায় হজের খুতবা শোনা যাচ্ছে মানারাতুল হারামাইন ওয়েবসাইট ও তাদের মোবাইল অ্যাপে। ওয়েবসাইট লিঙ্ক হলো :
https://manaratalharamain.gov.sa/arafa/arafa_sermon/bn
এ ছাড়া অন্য ভাষাগুলোতে খুতবা শুনতে যেকোনো ডিভাইস থেকে মানারাতুল হারামাইন (
https://manaratalharamain.gov.sa/) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি ভাষা নির্বাচন করলে খুতবার অনুবাদ শোনা যাবে। একইসঙ্গে মানারাতুল হারামাইন মোবাইল অ্যাপেও তা শোনা যাবে। আর ওয়েবসাইটে বিগত বছরের খুতবা ও এর অনুবাদও পাওয়া যাবে।