আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

দ্বিগুণ দাম দিয়েও মিলছে না এমওপি সার

দ্বিগুণ দাম দিয়েও মিলছে না এমওপি সার

আমন মৌসুমের শুরুতেই সার সংকট দেখা দিয়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম গঞ্জে ব্যবসায়ী ও দোকানগুলোতে মিলছে না এমপিও সার। ডিলারদের কাছে কিছু পাওয়া গেলেও কৃষকদের কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে। এছাড়াও তরতরিয়ে বেড়েছে ইউরিয়া সারের মূল্য। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কীটনাশকের দাম। সবকিছু মিলিয়ে আমন আবাদে বাড়তি খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাজ পরেছে কৃষকদের কপালে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাত ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর, উফশী ৯৪ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং স্থানীয়জাত ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৫ মেট্রিকটন। এবার ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৯৩ জন কৃষক আমনচাষে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু ডিজেল এবং ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধিসহ হালচাষে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভাবনায় দিন কাটছে তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আমন চাষাবাদে ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে ৯২ হাজার ৩০৬ মে.টন। টিএসপি টিএসপি ২২ হাজার ৮৭১ মে.টন, ডিএপি ৪৩ হাজার ৪৩৩ মে.টন, এমওপি ৫২ হাজার ১৯৫ মে.টন, জিপসাম ৩৬ হাজার ৪৭২ মে.টনসহ অন্যান্য সার। এরমধ্যে জেলায় ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৫৫ হাজার ২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১০ হাজার ৪৪৬ মেট্রিকটন, ডিএপি ১৫ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন, এমওপি ২৩ হাজার ৮৮৭ মেট্রিকটন এবং জিপসাম ১৪ হাজার ৬৫৬ মেট্রিকটনসহ চাহিদার অর্ধেক অন্যান্য সার। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার সুযোগে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ অধিক মূল্যে কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করছেন ডিলার এবং ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে এমওপি সারের দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশী। খুচরা বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা এমওপি সার সরকারের দেয়া নির্ধারিত দাম ৭শ টাকা হলেও বিক্রি করা হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা দরে। অনেক সময় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিএপিতে বস্তা প্রতি দাম বাড়িয়েছে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। শুধুমাত্র ইউরিয়াবাদে অন্যান্য সব ধরণের সারে মূল্য বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে তা কিনছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

এদিকে সারের পাশাপাশি দ্বিগুণ মূল্যে ডিজেল ও কীটনাশক কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তিত কৃষক। একসাথে কৃষির সাথে সম্পর্কিত সবধরণের জিনিষপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকদের এখন নাভিশ^াস অবস্থা। তারা কিভাবে এই বাড়তি মূল্য সমন্বয় করবেন তানিয়ে রয়েছেন ভীষন দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনায়।

জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ী এলাকার কৃষক আতাউর রহমান জানান, তিনদিন বিভিন্ন হাটেবাজারে ঘুরেও পটাশ (এমওপি) সার পাইলাম না।

একই এলাকার আলতাফ হোসেন জানান, অনেক খুঁজে পাশর্^বর্তী লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ী বাজার থেকে ১৪শ’ টাকায় এক বস্তা পটাশ সার কিনলাম। এত দাম বাড়লে কৃষক চলবে কিভাবে।

এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর এলাকার কৃষক হারেজ আলী ও বেরুবাড়ী এলাকার কৃষক বিমল চন্দ্র সিংহ জানান, তারা প্রত্যেকে ৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন জমিতে অন্যান্য সারের সাথে পটাশ (এমওপি) সার দিতে হচ্ছে কিন্তু বাজারে পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সময়মতো সার দিতে পারছেন না জমিতে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের সতিপুরী এলাকার কৃষক রেজাউল করিম জানান, দ্বিগুণ দাম দিয়ে কয়েক কেজি পটাশ (এমওপি) এনে জমিতে ছিটিয়েছি। পটাশের সাথে ডিএপি সারেও দাম বাড়িয়েছে ব্যাপবসায়ীরা। দ্বিগুণ দামে এমওপি সার বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায় কয়েকটি সার ডিলারের দোকানে।

নাগেশ্বররী কচাকাটা বাজারে কেদার ইউনিয়নের ডিলার মেসার্স কাশেম ট্রেডাসে গিয়ে দেখা যায় দ্বিগুণ দামে এমওপি সার বিক্রি করছেন। এখানে ডিলারের নিযুক্ত ব্যাক্তি সাইদুল ইসলাম জানান, বেশি দামে সার বিক্রি করা ঠিক না তার দোকানের কর্মচারী ভুলে বিক্রি করে ফেলেছে।

একই ইউনিয়নের সার ডিলার আল মামুন জানান, এমওপি সারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় তিনি তা ক্রয় বিক্রিয় বন্ধ করে দিয়েছেন। তাছাড়া এমওপি সার পাওয়াও যাচ্ছে না।

এদিকে, কৃষি বিভাগের তথ্য মোতাবেক জেলার ৯ উপজেলায় বিএডিসি সার ডিলার রযেছে ১০৬ জন, বিসিআইসি’র সার ডিলার ৯৪জন, খুচরা সার বিক্রেতা ২৭৩জন এবং পাইকারী বিক্রেতা ১৪১জন এবং খুচরা বিক্রেতা ১হাজার ৯০৭জন। এছাড়াও জেলায় কীটনাশক ডিলার রয়েছে ১ হাজার ২৬৩জন এবং লাইসেন্সকৃত কীটনাশক বিক্রেতার সংখ্যা ২হাজার ৪৮টি।

এ প্রসঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, চাহিদার তুলনায় সারের কম বরাদ্দ পাওয়ায় কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট কিছু দিনের মধ্যে কেটে যাবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন দ্বিগুণ | দাম | দিয়েও | মিলছে | এমওপি | সার