একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তিতে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ ধাপে আবেদন করেও কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন জিপিএ-৫ পাওয়া সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীও। এছাড়া দেশের ২২০টি কলেজ ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীও পায়নি।
রোববার (২৩ জুন) রাতে প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ফলাফলে দেখা গেছে, গেলো ২৬ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত একাদশে ভর্তি হতে অনলাইনে আবেদন করেছিলেন ১৩ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পছন্দের কলেজ পেয়েছেন ১২ লাখ ৮৭ হাজার শিক্ষার্থী।
একাদশে ভর্তির প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ
বাকি ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো পছন্দের কলেজ পাননি। কলেজ না পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল বলে বিবেচিত জিপিএ-৫ শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। আর একজন শিক্ষার্থীও পায়নি এমন কলেজের সংখ্যা ২২০টি।
যে কারণে কলেজ পাননি জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী-একজন শিক্ষার্থী তার এসএসসির ফলাফল ও অনলাইন আবেদনের সময়ে দেওয়া পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন। একজন শিক্ষার্থী ১০টি কলেজ পছন্দক্রমে দিতে পারেন। অনেকে পছন্দের দুই, তিন বা চারটি কলেজ পছন্দক্রমে দেন।
মূলত তাদের সেই কলেজগুলোতে আসন শূন্য না থাকায় তারা ভর্তির সুযোগবঞ্চিত হন বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নজর দেশের ভালো কলেজগুলোতে। তারা হাতে গোনা কয়েকটি কলেজ পছন্দক্রমে দেন। যেখানে সবার আকর্ষণ বেশি। এজন্য সেখানে প্রতিযোগিতা হয়। আর সেসব কলেজে জিপিএ-৫ প্রাপ্তরাই কেবল চান্স (সুযোগ) পান।’
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘অনেক সময় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্য থেকে নম্বরের হিসাবে সামনের কয়েকজন সুযোগ পান। আর জিপিএ-৫ পেয়েও নম্বর কম থাকায় অনেকে বাদ পড়ে যান।’
কলেজ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের করণীয়
প্রথম ধাপে আবেদন করে যারা কলেজ পাননি, তাদের জন্য কী করণীয় তাও জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
এ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এসব শিক্ষার্থীদের আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় ধাপে চলে যাবে। এখন শিক্ষার্থীদের শুধু অনলাইন আবেদনে গিয়ে পছন্দক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পরামর্শ থাকবে, তারা যেন পছন্দক্রমে নতুন কিছু কলেজ যোগ করে। তবে আমাদের আসনের কোনো সংকট নেই। সব শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবে।’
এদিকে প্রথম ধাপে আবেদন করে কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হওয়া শিক্ষার্থীদের দ্রুত কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমেই তাদেরকে ৩৩৫ টাকা ফি পরিশোধ করে প্রাথমিকভাবে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নিশ্চায়ন ফি পরিশোধ করতে কারও অসুবিধা হলে সরাসরি বিকাশের মাধ্যমে নিশ্চায়ন ফি দিয়েও নিশ্চায়ন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
কেউ যদি প্রথম ধাপে কাঙ্ক্ষিত কলেজ না পান, সেক্ষেত্রেও তাকে প্রাথমিক নিশ্চায়ন করতে হবে। ২৯ জুন রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক নির্বাচন নিশ্চায়ন করতে পারবেন। এরপর তিনি মাইগ্রেশনের সুযোগ পাবেন। ৪ জুলাই পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।
দ্বিতীয়-তৃতীয় ধাপে আবেদন ও ফল
৩০ জুন শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের আবেদন প্রক্রিয়া। এ ধাপে আবেদন চলবে ২ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত। ৪ জুলাই রাত ৮টায় দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। ৫ থেকে ৮ জুলাই রাত ৮টা পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া চলবে। এরপর ১২ জুলাই দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে।
৯-১০ জুলাই তৃতীয় ধাপে আবেদন শুরু হবে। ১২ জুলাই তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ এবং ১৩-১৪ জুলাই তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন করতে হবে।
তিন ধাপে নির্বাচিত এবং সফলভাবে নিশ্চায়ন করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে ১৫ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে একযোগে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।
চলতি বছর এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২৫ লাখের মতো।