আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

কিংবদন্তী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কিংবদন্তী বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে পদক প্রাপ্ত ভাটির ভাটির পুরুষ খ্যাত কিংবদন্তি, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে রা ফেরার দেশে চলে যান আব্দুল করিম।

বাউল সম্রাটের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উজানধলের বাড়িতে দোয়া, মিলাদ মাহ্ফিল, আলোচনা সভা এবং  আজ রাত  নয়টা থেকে বাউল গানের আসরের আয়োজন করা হয়েছে।

‘বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘কেমনে ভুলিবো আমি বাঁচি না তারে ছাড়া’, ‘আমি তোমার কলের গাড়ি’, ‘সখী কুঞ্জ সাজাও গো’, ‘জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে মানুষ হয়ে তালাশ করলে’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু’, ‘বসন্ত বাতাসে সইগো’, ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা শাহ আব্দুল করিম। প্রয়াত এই বাউলের সুরধারার ভক্ত সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। মৃত্যুর পর যেন তিনি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান। দারিদ্রের সঙ্গে আজন্ম যুদ্ধ ছিল তার। কৃষি কাজের পাশাপাশি রচনা করেন কালজয়ী সব লোকগান। সমাজের নানা কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সুরে সুরেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন আজীবন।

বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম নেন কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে।
 
তিনি তার গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে। জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষিকাজ করে। কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের প্রেরণা তার স্ত্রী, যাকে তিনি আদর করে ‘সরলা’ নামে ডাকতেন। ১৯৫৭ সাল থেকে শাহ আবদুল করিম পাশের উজানধল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীরে বেড়ে উঠা শাহ আব্দুল করিমের গান শুরুতেই ভাটি অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও শহরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে। আর্থিক অসচ্ছলাতার কারণে কৃষিকাজে বাধ্য হলেও কোনো কিছুই তাকে গান রচনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

গানের মধ্যে প্রাণের সন্ধান পাওয়া শাহ্ আবদুল করিম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকসহ (২০০১) পেয়েছেন কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী পদক (২০০০), রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), লেবাক অ্যাওয়ার্ড, (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা (২০০৮), হাতিল অ্যাওয়াডর্স (২০০৯), এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা ইত্যাদি।

শাহ আব্দুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬শর বেশি গানে, যেগুলো সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে।

তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে আফতাব সঙ্গীত, গণ সঙ্গীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে, শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র উল্লেখযোগ্য।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন কিংবদন্তী | বাউল | সম্রাট | শাহ | আব্দুল | করিমের | মৃত্যুবার্ষিকী | আজ