আন্তর্জাতিক

জাপানে ৬ মাসে নিঃসঙ্গ অবস্থায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু

বায়ান্ন আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাপানের এক প্রবীণ নাগরিক ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু। এদের ৭০ ভাগেরই বয়স ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি। কোনো কোনো মৃতদেহ পাওয়া গেছে একমাস পর, কোনটি তিনমাস পর। আবার কোনো কোনো মৃতদেহ পাওয়া গেছে মৃত্যুর এক বছর পর। নিঃসঙ্গ একাকী জীবনের এমনই ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম উন্নত আর ধনী দেশ জাপানের। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, মৃত্যুর সময়ও কাউকে পাশে পাচ্ছে না দেশটির বহু সংখ্যক নাগরিক!

বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ুর দেশগুলোর অন্যতম জাপান। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রবীণ জনসংখ্যার বসবাস। তরুণ-তরুণীদের বিয়ে না করা কিংবা দেরিতে বিয়ে করার প্রবণতা অথবা, দম্পতিদের সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিহার কারণে  প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে  জনশক্তি সংকটের মুখে পড়েছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটি। চিকিৎসা ও কল্যাণ ব্যয় বাড়লেও বিপরীতে জাপানে কমছে শ্রমশক্তি।

দেশটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,২০২০ সালে দেশটিতে ৭৩ লাখ ৭০ হাজার বয়স্ক মানুষ একা বসবাস করতেন। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার জাপানে একাকী বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে,তাতে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ৫টি পরিবারের একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে একাকী জীবন কাটাতে হবে। এহিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষকে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে।

জাপানে প্রবীণ জনসংখ্যার বেশির ভাগই একাকী বসবাস করেন।কেউ কেউ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন  হয়ে অনেক দূরের কোনো জায়গায় আস্তানা গাড়েন। আধ্যাত্মিক, বুদ্ধিভিত্তিক,আত্মকেন্দ্রিক ও সামাজিক নিঃসঙ্গতা আর মানসিক একাকীত্বে কাটে তাদের জীবন। সারা জীবন কঠোর পরিশ্রম করে জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে একটু আরাম-আয়েশ তো দূরের কথা,উল্টো অধিকাংশ প্রবীণ লোক যে কত অসহায় হয়ে পড়ে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জাপান পুলিশের একটি প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জাপানে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজবাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা গেছেন। এসব মানুষের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার জনকে মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পর উদ্ধার করা হয়েছে।  সংস্থাটির প্রত্যাশা, তাদের এ প্রতিবেদন জাপানের বিপুলসংখ্যক প্রবীণ মানুষের একাকী জীবনযাপন করে মারা যাওয়ার বিষয়কে লোকচক্ষুর সামনে নিয়ে আসবে।

জাতীয় পুলিশ সংস্থার সংগ্রহ করা চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের তথ্যে দেখা গেছে, একাকী জীবনযাপন করা ৩৭ হাজার ২২৭ জনকে তাঁদের নিজেদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৭০ ভাগেরও বেশি ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সী।

জাপান পুলিশের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাওয়া ওই মানুষদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশকে তাঁদের মৃত্যুর এক দিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রায় ৩ হাজার ৯৩৯ জনের মরদেহ মিলেছে মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পরে। এ ছাড়া, ১৩০ জনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তাঁদের মৃত্যুর অন্তত এক বছর পর।

মৃত এসব মানুষের মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৮ জনের বয়স ৮৫ বছর বা এর বেশি। ৫ হাজার ৯২০ জনের বয়স ৭৫-৭৯ বছর এবং ৫ হাজার ৬৩৫ জনের বয়স ৭০-৭৪ বছরের মধ্যে।

জাপানের সরকারি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনএইচকে জানায়, যেসব মৃত মানুষের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি, তাঁদের শনাক্ত করতে পুলিশের ওই সংস্থা তাদের এ অনুসন্ধানের তথ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নিঃসঙ্গতা | জাপান