আজকের শিশুরাই আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎ। তারা শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, চিন্তায়-চেতনায় ও মননে যত সমৃদ্ধ হবে জাতির ভবিষ্যৎ তত শক্তিশালী হবে। কিন্তু অযত্নে, অবহেলা, অশিক্ষা ও অপুষ্টির শিকার হাজার হাজার শিশু। চরম দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের জন্ম নেয়া এসব শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
সমাজ থেকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিশু। শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার হচ্ছে শিশুদের উপর। মেয়ে শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে। নানান দেশে পাচার করা হচ্ছে শিশুদের। আজকের এই শিশু যে আগামীর ভবিষ্যৎ তা নিশ্চিত করতে কিছু করনীয় রয়েছে। যেমন-
শিশুদের জন্য চাই ভালোবাসা মমতা
প্রত্যেক বাবা মা-ই চান সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, তারপরও নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসের শিকার হতে হয় অনেক শিশু সন্তানকেই। এমন পরিস্থিতি এড়াতে চাই স্নেহ, মমতা, উদারতা।
নির্যাতনের শিকার শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলা
শারীরিক হোক, মানসিক হোক বা যৌন নির্যাতন হোক যে কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার শিশুদের মনোবল একদম ভেঙ্গে পড়ে। তাই শিশুকে যেমন ভয়মুক্ত করতে হবে, তেমনই সাহায্য করতে হবে যাতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায় সেই সাথে তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। শিশুদের বুঝাতে হবে যে নির্যাতনের শিকার হবার পেছনে তদের হাত নেই। আদর ভালবাসা পেলে তাদের জন্য ভয়ানক অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া সহজতর হয়। তাই নির্যাতনের শিকার শিশুদের প্রতি এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।
শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা
ধনী গরিব মিলিয়ে আমাদের এই সমাজ। সমাজের মানুষের প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমাদের সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। শিশুর মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং ছিন্নমূলদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আপনার আমার যার যেমন সামর্থ্য আছে তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা
গ্রামের শিশু যারা শহরে কাজের খোঁজে আসে তাদের প্রতি আমদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের জন্য শিক্ষার আলোর ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আমরা কাম্য করতে পারি, কেননা শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। শিক্ষার আলো কোন পথ শিশুকে খারাপ পথে ধাবিত করবে না। যেসব শিশুরা বাসায় কাজ করে আমরা তাদের প্রতি একটু সহানুভূতি দেখিয়ে তাদেরকে ঘরের কাজের পাশাপাশি বাসায় তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে পারি। এভাবে অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি।
শিশু অধিকার আইন বাস্তবায়ন
আমরা যে যেখানে থাকি সেখানে এলাকা ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে পারি, মানব বন্ধন করতে পারি শিশু অধিকার আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। সমাজের মানুষ হিসেবে গরিব শিশুদের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারি। শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করতে পারি। যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা বিতরণ। এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন এর জন্য আমরা কনসার্টের আয়োজন করতে পারি।
শিশুদের জন্য মাদক বিষয়ক ক্যাম্পেইন
শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে তাদেরকে মাদক এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে বুঝাতে হবে। ক্যাম্পিং এবং কাউসিলিং এর মাধ্যমে আমরা এই বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারি। আমাদের সামাজিক এবং নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এমন অনেক কিছুই আমরা প্রায়ই এড়িয়ে যাই কিন্তু আমরা যদি প্রত্যেকটি শিশুকে নিজেদের পরিবারের একটি অংশ হিসেবে মেনে নিতে পারি তাহলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এর লক্ষ্যে কাজ করে যেতে পারি।
তাই নির্যাতনের শিকার শিশুকে আর অবহেলা নয়, বরং দেশের নাগরিক হিসেবে বন্ধু ও পরম আত্মীয় হয়ে পাশে দাঁড়ান এবং তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করুন। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনি সক্ষম হবেন ও সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে পারবেন। আপনাকে নিজেকে তৈরি করতে হবে এবং সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ আপনি যতদূর সাহায্য করতে পারেন তা করতে হবে।
জেএইচ