কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দুই দেশের ২০০ দালাল সহযোগিতা করছেন বলে দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়টি বায়ান্ন টিভিকে নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে হেঁটে নাফনদীর ওপারের আসেন রোহিঙ্গারা। সেখানে নৌকা নিয়ে বসে থাকেন দালালরা। এপারে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তেও থাকেন দালালরা। রাতে তারা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশে।
উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতের বেলা মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া ও নুরুল্লা পাড়া গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। এছাড়াও রোহিঙ্গারা টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ, ঘোলার চর, জালিয়া পাড়া, সাবরাং, নয়া পাড়া, টেকনাফের জাদিমুড়া, নাইট্যংপাড়া, বড়ইতলি, কেরুনতলি ও বাহারছড়া ইউনিয়নের সাগর উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিয়ে দেশে আসছেন।
উখিয়া পাংলাখালী ইউপি চেয়ারম্যান এমএ গফুর চৌধুরী জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে না থাকার সুযোগে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। মূলত সীমান্তে কিছু দালাল জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে ঢুকতে সহযোগিতা করছেন। গত এক সপ্তাহে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছেন। উখিয়া পালংখালী সীমান্তে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।
টেকনাফ সাবারাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, দিনে রোহিঙ্গারা সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করেন। রাতে দালালের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। প্রতিদিন কমবেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছেন।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের সদস্য নজির আহমদ বলেন, এক সপ্তাহে টেকনাফ সীমান্তে দিয়ে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে করেছেন। কেরনতলি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তিনি শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক দিন ধরে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের চলমান যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে। গেল রোববার সন্ধ্যা থেকে আজ সোমবার বিকাল পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। মংডু টাউনে থাকা সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক (ব্যাটালিয়ন) দখলের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি। গোলাগুলির পাশাপাশি দুই পক্ষ থেকে ছোড়া হচ্ছে মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমা। মাঝেমধ্যে ড্রোন হামলাও চালানো হচ্ছে।
মংডু টাউনের পাশে লাগোয়া পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া দখল করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। মংডুসহ আশপাশের রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, গত কয়েক দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য তারা পেয়েছেন। বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
আই/এ