কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ছিল এর সপ্তম দিন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটা সমাধানে পৌঁছাতে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সন্ধ্যা ৭টায় বৈঠক শুরু হয়ে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।
বৈঠক শেষে মমতা বললেন, চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে মঙ্গলবারই সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের দাবি মেনে নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাকেও অপসারণ করা হচ্ছে। তিন জনকেই অন্য পদে দায়িত্ব দেয়া হবে।
মমতা জানান, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবিই তারা মেনে নিয়েছেন। এবার আশা করছেন, আন্দোলনকারীরা কাজে ফিরবেন।
তার কথায়, ৯৯ শতাংশ দাবি মেনে নিয়েছি। আর কী করব!
তিনি জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচটি দাবির প্রথমটি সিবিআই এবং আদালতের বিষয়। বাকি চারটির মধ্যে তিনটিতে সায় দিয়েছে তার সরকার। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরানো হবে। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) অভিষেক গুপ্তকেও সরানো হচ্ছে। সরিয়ে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কৌস্তভ নায়েক, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিস হালদারকেও।
মমতা বলেন, আমরা কাউকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান করিনি। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে যেহেতু চিকিৎসকদের ক্ষোভ আছে, বলেছেন ওদের ওপর আস্থা নেই, তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি এ-ও জানান, চিকিৎসকদের দাবি মতো কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে সরকার। তিনি বলেন, প্রায় ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে। ওদের পক্ষ থেকে ৪২ জন সই করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে মিনিটসে্ সই করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি চিকিৎসকদের। আমরা খুশি যে, তারাও খুশি। ওরা বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলেন। সেই সুযোগ দিয়েছি। আমরাও আমাদের বক্তব্য রেখেছি।
একইসঙ্গে চিকিৎসকদের উদ্দেশে মমতার বার্তা প্লিজ, এ বার কাজে ফিরুন।
এদিকে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, আন্দোলনকারীদের কাছে নতস্বীকার করল রাজ্য সরকার। ৩৮ দিন পর আমাদের জয় হয়েছে। এই জয় সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক, নার্স— সকলের। সবাই পাশে না থাকলে এই জয় সম্ভব ছিল না। সে জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
তিনি আরও বলেন, আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবস্থান বিক্ষোভ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পর আমরা আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেব।
পাশাপাশি চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি, ‘থ্রেট কালচার’ তৈরি হয়েছে, তা সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা থাকবে বলেও জানান তারা।
চিকিৎসকদের এক প্রতিনিধি বলেন, যেটুকু দাবি আমরা পূরণ করিয়ে আনতে পেরেছি, সেটাও আমাদের আন্দোলনের জয়। এটুকু পেতে আমাদের ৩৮ দিন সময় লেগে গেল। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি রয়েছে সে দিকে নজর থাকবে আমাদের। এ ছাড়াও কত দিনে আমাদের দাবিগুলি বাস্তবায়িত হয় সে দিকেও নজর থাকবে আমাদের।
এসি//