আসছে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি ভোটগ্রহণ। সবশেষ জরিপ অনুযায়ি, কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্প ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের প্রশ্ন– ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে কী পরিবর্তন আসতে পারে?তবে আশঙ্কা আর উদ্বেগ নিয়ে অধিকাংশ মার্কিনীদের জিজ্ঞাসা-ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটতে পারে?
রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনোই নির্বাচনী পরাজয় মেনে নেননি। ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরাজয় মেনে নিতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতির ফলে ২০২০ সালে দেশটিতে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। এবারও অনেকে সেই সহিংসতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন।
নিউইয়র্ক রাজ্যের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নিম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প যদি এ বছর হেরে যান, কোনো সন্দেহ নেই তিনি দাবি করবেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে কোনো কসরত বাকি রাখবেন না তিনি। এমনকি কমলার অভিষেক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে অস্বীকার করবেন ট্রাম্প।’
এএফপির প্রতিবেদন বোলছে, ট্রাম্পের অতীত কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে, নির্বাচনে প্রতারণার চেষ্টা করা তাঁর জন্য অসম্ভব কিছু নয়। একজন পর্নো তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তিনি গোপনে অর্থ দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ৩৪টি অপরাধমূলক ধারায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনেও জালিয়াতি ও প্রতারণা করার অভিযোগে তাঁকে দু’বার অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে তিনি দু’বার অভিশংসিত হয়েছেন।
গত নির্বাচনে হেরে ট্রাম্প তাঁর বিক্ষুব্ধ সমর্থকদের ওয়াশিংটনে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পর ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্যাপিটলে ভয়াবহ দাঙ্গা বাধান তারা। এবারও সেই রকম সহিংসতার পুনরাবৃত্তি করছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমালোচকরা। ট্রাম্প এরই মধ্যে ওই ধরনের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। গত মাসে মিশিগানে এক সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যদি হেরে যাই... এটার সম্ভবত কারণ তারা জালিয়াতি করবে। এটাই একমাত্র কারণ যে, আমরা হারতে যাচ্ছি ... কারণ তারা প্রতারণা করবে।’
নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে কী হতে পারে তার একটি ধারণা দিয়েছে উটাহ-ভিত্তিক পিআর ফার্ম ক্রোনাস কমিউনিকেশন। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাড্রিয়েন উথে বলেছেন, এবার আইনি সংঘাত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় বিক্ষোভ এমনকি বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হতে পারে।
প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিন নাগরিকের আশঙ্কা নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা ঘটতে পারে। সম্প্রতি স্ক্রিপস নিউজ/ইপসোস প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, ৫ নভেম্বর ভোট শুরু হওয়ার পরে সহিংসতা দমন করতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করাকে সমর্থন করেন বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডোনাল্ড নিম্যান বলেছেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় ভয় হলো ম্যাডিসন, উইসকনসিন, ল্যান্সিং, মিশিগান, হ্যারিসবার্গ বা পেনসিলভানিয়ায় সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকরা ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে পারে।’
তবে বিশ্লেষকরা এবার রাজাধানী ওয়াশিংটনে ২০২১ সালের বিদ্রোহের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা দেখেছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা- ওই সহিসংতার ঘটনায় শত শত মামলা এবার শক্তিশালী প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে নির্বাচনের সময় এবং পরে রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে সহিংসতার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন বিষেষজ্ঞরা।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও রক্তপাতের সম্ভাব্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের অফিস এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ‘বিদেশি মদদে হিংসাত্মক প্রতিবাদ, সহিংসতা বা শারীরিক হুমকি এবং রাজ্য এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের ফলাফল প্রত্যয়ন এবং ইলেক্টোরাল কলেজ প্রক্রিয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বিক্ষুব্ধরা।
এমআর//