বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আজ রোববার (০১ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বহুল প্রতীক্ষিত ‘অর্থনীতির শ্বেতপত্র’। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের উপস্থিতিতে এটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে সোমবার (২ ডিসেম্বর) ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত ১২ সদস্যের ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’ এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। এতে উঠে এসেছে গেলো ১৫ বছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দুর্নীতি ও অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র।
কমিটির ৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের বিশদ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। তবে সময়ের অভাবে অর্থ পাচারের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
শ্বেতপত্রে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে:
- সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা
- মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
- বাহ্যিক লেনদেনের ভারসাম্য
- জ্বালানি ও বিদ্যুৎ
- বেসরকারি বিনিয়োগ
- কর্মসংস্থান
এছাড়া, শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিচালনা পদ্ধতিই ছিলো দুর্নীতি সহায়ক। এতে বলা হয়, গেলো ১৫ বছরে সরকার যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, সেই পদ্ধতিই ছিল দুর্নীতি ও অনিয়মকে উৎসাহিত করার। তাই এত বেশি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে!
জানা গেছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে এতে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পরিস্থিতি, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব আয়, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও বৈষম্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা প্রকল্পগুলোর ওপরও থাকছে বিশ্লেষণধর্মী পর্যবেক্ষণ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, জনশক্তি রপ্তানি বিশেষজ্ঞ তাসনিম সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শারমিন্দ নীলোর্মি এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।
জেডএস/