লড়াই-সংঘাতের পর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু দখলে নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গেলো রোববার (৮ ডিসেম্বর) মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় গোষ্ঠীটি।
আরাকান আর্মির দখলে মংডু চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ ও মায়ানমারে দুই পারের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। রাখাইন রাজ্যে এখনও পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরাকান আর্মির বিরোধ। রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ। কাউকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এহসান উদ্দিন বলেন, ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউন পুরোপুরি দখলে নিয়েছে। একই দিন তারা (এএ) দেশটির জলসীমানায় (নাফ নদীতে) সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে তাঁরাও টেকনাফের নৌযানগুলোকে নাফনদীতে চলাচল করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তবে বিকেলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করেছেন।
মংডু দখলে নেয়ার পর আরাকান আর্মি নাফ নদীতে নৌ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকেরা সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট দিয়ে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পাঁচ দিন ধরে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে খাদ্যসামগ্রীর মজুত কমে গেছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মায়ানমার থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ বা বাংলাদেশে আসতে পাচ্ছে না।
মায়ানমারের মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। নাফনদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানা ভাগ করে রেখেছে। রাখাইন রাজ্যের বিপরীতে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তৃত। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ-উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটারে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সেখানে গোলাগুলি বন্ধ আছে। মর্টার শেল, গ্রেনেড বিস্ফোরণও থেমে গেছে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলেও দুই পারের সীমান্তজুড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এত দিন ওপারের বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপেছিল টেকনাফ সীমান্ত।
এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফনদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মায়ানমারের কাউকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মায়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
এম এইচ//