পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে 'সন্ত্রাসী' কার্যক্রম সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এতে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ এবং প্রতিরোধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তৎপরতা নিয়েও তথ্য জানানো হয়েছে।
‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম ২০২৩: বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায়ই রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে চালিয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু অংশের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগও ছিল। ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ করে আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও ইসলামিক স্টেটস (আইএস) সংশ্লিষ্ট নব্য জামাতুউল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (নব্য জেএমবি) দমনে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা অব্যাহত আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মে মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় দুজন সেনাসদস্য নিহত হন। বাংলাদেশের সরকার এই হামলার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) দায়ী করে। গত বছরের মার্চ মাসে একই ধরনের হামলায় একজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ২০২২ সাল থেকে আল-কায়েদা অনুপ্রাণিত নতুন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে কেএনএফ। ২০২৩ সালের শুরুর দিকেই জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কার্যক্রম অনেকাংশ বন্ধ করে দেওয়ার দাবি করেছে বাংলাদেশ। পরে ওই বছরের জুলাই মাসে এই গোষ্ঠীর প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত দুই আসামীকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০১৫ সালে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মইনুল হাসান শামিম ও আবু সিদ্দিক সোহেলের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদনে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলের পর ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) নামে আগের আইনের কিছু ধারা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে। এ আইনে পুলিশকে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সমালোচক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতাও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে র্যাবসহ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলা করেছে ৫৫টি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদারকরণ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে কাজ করছে।
২০২৩ সালে রোহিঙ্গা শিবির থেকে সন্ত্রাসবাদী কোনো হুমকি পাওয়া যায়নি। তবে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সহিংসতার ঘটনা এখনো উদ্বেগের বিষয় জানিয়ে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যাতে সন্ত্রাসবাদী হামলার ক্ষেত্রে জড়ানো না হয়, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের অভিযানও চালাচ্ছে।
বাংলাদেশে আর্থিক সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি জোটে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট এডমন্ট গ্রুপের সদস্য। ২০২৩ সালে এ নিয়ে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এম এইচ//