আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো আসার সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গেলো শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি (শারমেন) বলেছেন যে, তারা আশা করেন বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলেছি, নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কিন্তু কে আসবে, কে আসবে না, তা রাজনৈতিক দলসমূহ বা ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যে দলগুলোর কোনো চালিকাশক্তি নেই, যে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো নেতা নেই; অতীতের ব্যাগেজগুলো তারা কেন টেনেছে, এর যথাযথ ব্যাখ্যা যারা জনগণের কাছে দিতে পারে না, তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো গ্যারান্টি দিতে পারবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি তাকে (শারমেন) বলেছি, নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি সব স্টেকহোল্ডারের কাছে নাম প্রস্তাব করেন। পরে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পান। এ প্রক্রিয়ায় কিছু ব্যক্তি বা দল অংশ নেয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫১ বছরের মধ্যে ৩২ বছর সেনাশাসিত সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। সেনা ছত্রছায়ায় মিসইউজ করে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো অন্বেষণ করার জন্য রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে। বিএনপির ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য, জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এত অল্প সময়ে তা পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্র করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে না এলে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলমের ভাষ্য, গ্রহণযোগ্যতা ২০১৪ নির্বাচনে ছিল, সামনেও অবশ্যই থাকবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের বিষয়গুলোতে তারা ততটুকুই বলবেন, তাদের দেশে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতরা যতটুকু বলতে পারেন। এর বাইরে যেন না যায়। আমাদের রাষ্ট্রদূতরা অনেক কিছুই করতে পারেন না, সেসব রাষ্ট্রে গেলে। তাদের কথা বলার সীমাবদ্ধতা আছে, তাদের অ্যাকসেসের সীমাবদ্ধতা আছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের আতিথেয়তাকে অপব্যবহার না করার জন্য বিদেশি দূতদের আহ্বান জানাচ্ছি । এটি যেন তারা দয়া করে মিসইউজ না করেন। যদি করেন তাহলে আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অতীতের মতো নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি গণমাধ্যমে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য ‘বাংলাদেশের প্রতি আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য’। যদি এটি উনি বলে থাকেন, এটি হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান। জনগণের প্রতি আস্থা না রেখে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা কিংবা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু বের করা হয়তো বিএনপির উদ্দেশ্যের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে অথবা বর্তমান সরকারের সঙ্গে সেসব রাষ্ট্রের সম্পর্কে বাধা সৃষ্টি করা হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুলের উচিত তারেক রহমানের বিষয়ে মার্কিন সম্পর্ক আরও উন্নত করা। তিনি যদি মনে করেন বিদেশিদের সাহায্য নিয়ে নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করবেন, তাহলে সেটি ভুল ধারণা।
বিপ্লব আহসান