জাতীয়

হাসিনার গোপন কারাগারের বন্দী ছিল শিশুরাও, দেয়া হতো না মায়ের দুধও

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেলো বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এই ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, সাবেক সরকারের শাসনামলের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ক্রমেই প্রকাশ্যে আসছে। এর মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং শিশুদের আটকের মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে এসেছে।

এক তদন্তে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার সরকার আমলে গোপন আটক কেন্দ্রে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করাই নয়, শিশুদেরও বন্দি রাখা হতো। এসব শিশুদের তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস আটক রাখা হতো, এবং কখনো কখনো মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য তাদের ব্যবহার করা হতো। এমনকি শিশুদের মায়ের দুধ পান করতে দেওয়াও বন্ধ রাখা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গোপন আটক কেন্দ্রে বন্দি থাকা শত শত লোকের মধ্যে অন্তত অর্ধডজন শিশু ছিল। তদন্তকারী কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় মানসিক নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকজন মা তাদের শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আটক ছিলেন। এমনকি একটি ঘটনায়, এক গর্ভবতী নারীকে তার দুই শিশুসহ আটক রাখা হয় এবং তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী কমিশনকে জানিয়েছেন, তিনি তার শৈশবে মায়ের সঙ্গে একটি গোপন বন্দিশালায় ছিলেন। তার মা আর কখনো ফিরে আসেননি। অন্য একটি ঘটনায়, এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়, যেখানে শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা হয়। এ ঘটনাগুলো নিরাপত্তা বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সম্পৃক্ততার দিকে ইঙ্গিত করে।

ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনা সরকার জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ অস্বীকার করত। তারা দাবি করেছিল, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকেই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে তদন্তকারী কমিশন জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ জন এখনও নিখোঁজ।

কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, ভুক্তভোগীরা তাদের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সরাসরি শনাক্ত করতে না পারলেও তাদের বর্ণনা থেকে সংশ্লিষ্ট বাহিনী চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এসব ঘটনার ফলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মানসিক, আর্থিক এবং আইনি জটিলতায় ভুগছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয় বরং সরকার ব্যবস্থার একটি অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

 

এসি//

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন শেখ হাসিনা | গোপন কারিগর | শিশু