অপরাধ

ধর্ষণ করতে গিয়ে খুন হন হাবীবুল্লাহ বাহারের উপাধ্যক্ষ: ডিএমপি

বায়ান্ন প্রতিবেদন

রাজধানীর উত্তরখানে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া অন্যের স্ত্রীর ওপর ধর্ষণ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. নাজিম হোসেন (২১) এবং তার স্ত্রী রুপা বেগম, যিনি জান্নাতি (২৩) নামে পরিচিত।

পুলিশ বলছে, ঘটনার কিছুদিন আগে পরিচিত নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতি দম্পতিকে কাজ দেওয়ার কথা বলে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান সাইফুর রহমান। এরপর থেকে ওই শিক্ষক জান্নাতিকে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন।

শুধু তাই নয়, নাজিমকে হত্যার ভয় দেখিয়ে সাইফুর রহমান, নাজিম ও জান্নাতি একই বিছানায় থাকা শুরু করেন। সবশেষ গত রবিবার দিবাগত রাতে ঘুম ভাঙলে নাজিম দেখতে পান সাইফুর রহমান তার স্ত্রীর শরীরের উপর উঠে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করছেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নাজিম ও জান্নাতি দুজন মিলে ধারালো বটি দিয়ে সাইফুর রহমানকে আঘাত করে। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বুধবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মুহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সোমবার রাত ২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া উত্তরখান থানার পুরানপাড়া বাতান এলাকার একটি ছয় তলা বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলার ৬নং ফ্ল্যাটে খুন হন। এ খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় ১১ মার্চ (মঙ্গলবার) একটি মামলা দায়ের করেন।

ডিসি মুহিদুল ইসলাম বলেন, মামলাটি রুজুর পর আলামত হিসেবে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা ছুরি ও বেডশিট নিয়ে আসে পুলিশ। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য, সিডিআর, সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই ও সাইফুর রহমানকে যারা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ ফরিদপুর রেলস্টেশন থেকে নাজিম ও জান্নাতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি জানান, ঘটনার কয়েকদিন আগে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিকটিম মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত মো. নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম ওরফে জান্নাতির পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার সুবাদে ভিকটিম গ্রেপ্তারকৃতদের তার ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন।

একপর্যায়ে মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া রুপা বেগম ওরফে জান্নাতিকে তার ফ্ল্যাটে আটক করে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত রাগ ও ক্ষোভ থেকে রবিবার রাতে ধারালো বটি দিয়ে মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে উপযুর্পরী আঘাত করে। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মৃতুবরণ করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন ডিসি মুহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

নিহত সাইফুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'থাকতে পারে। আমরা তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তবে এরকম কোনো তথ্য এখনও পাইনি।'

মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টার কারণে সাইফুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় মামলাটি কোন পর্যায়ে যাবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি মুহিদুল বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এটি একটি হত্যা মামলা। আদালতে যখন মামলাটি ট্রায়াল হবে, তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের পর আদালত পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ | উপাধ্যক্ষ