স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এখন অনেকেই খাবারের মধ্যে চিনির পরিমাণ এবং তেলে ভাজা খাবারের নিয়ন্ত্রণ নিজের আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে। তবে চিনি ও তেলের মধ্যে কোনটি বেশি ক্ষতিকর এবং কীভাবে এগুলো শরীরের ভেতরে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে অনেকেরই অনেক রকম প্রশ্ন। তবে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খাবারের বিষয় নিয়ে অনেকেই অনেকরকম মতামতের ভিডিও দিয়ে থাকেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরামর্শ এবং চিকিৎসক শিব কুমার সারিনের বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিনি এবং তেলের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর তেল শরীরের নানা ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে লিভার, হৃদ্যন্ত্র, ওজন এবং রক্তচাপের ক্ষেত্রে। তবে সব তেল খারাপ নয় এবং কিছু তেল সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা শরীরের জন্য উপকারী।
চিনি
চিনি শরীরে প্রবেশ করার পর একাধিক শারীরিক প্রভাব ফেলতে পারে। ১ গ্রাম চিনিতে রয়েছে ৪ ক্যালোরি। অতিরিক্ত চিনি খেলে এটি ফ্যাটি লিভার,স্থূলতা এবং হৃদ্যন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে। চিনি রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ইনস্যুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। এর ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। চিনির মধ্যে পুষ্টিহীন ক্যালোরি থাকে, যা শরীরের চর্বি হিসেবে জমে গিয়ে ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত চিনি লিভারে ফ্যাট জমাতে পারে, যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগের দিকে পরিচালিত করতে পারে। এটি লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। চিনি অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাছাড়া চিনি শরীরে অতিরিক্ত থাকলে ত্বকের সমস্যা, দাঁতের ক্ষয়, হজমে সমস্যা এবং মানসিক চাপের মতো বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তেল
১ গ্রাম তেলে ৯ ক্যালোরি থাকে। অতিরিক্ত তেল বিশেষত হাইড্রোজেনেটেড বা ট্রান্স ফ্যাট তেল, হৃদ্যন্ত্রের রোগ এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত বা অস্বাস্থ্যকর তেল খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তবে কিছু তেল শরীরের জন্য উপকারীও হতে পারে।
অতিরিক্ত তেল খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যেটি ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যদি তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট থাকে, তবে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে ভাজা ও অতিপ্রক্রিয়াজাত তেল এ ধরনের ফ্যাট ধারণ করে। তেলের অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা কমাতে পারে। কিছু তেলে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন জলপাই তেল, সর্ষের তেল, নারকেল তেল) থাকে, যা মস্তিষ্কের সঞ্চালন এবং কোষের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) চিনি থেকে পাওয়া ক্যালোরির পরিমাণ ১০ শতাংশের মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। অর্থাৎ, দৈনিক ১০০০ ক্যালোরি খেলে ১০০ ক্যালোরি বা ৪ চা-চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়।অর্থাৎ,তেলের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর তেল সীমিত আকারে এবং প্রক্রিয়াজাত তেল যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর সেটি থেকে দূরে থাকা উচিত।
চিনি এবং তেলের মধ্যে কোনটি খারাপ তা নির্ভর করে এই দুইটির ব্যবহার কতটুকু পরিমাণে হচ্ছে এবং সেটি কিভাবে প্রভাব ফেলবে। তাই দুটির ব্যবহারই স্বল্প পরিমাণে করা উচিত কেননা, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।
এসকে//