লাইফস্টাইল

অটিজম: চ্যালেঞ্জের মাঝে সম্ভাবনার পথ এবং অভিভাবকদের করণীয়

লাঈফস্টাইল

ছবি: সংগৃহীত

অটিজমকে অটিস্টিক স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) নামেও বলা হয়ে থাকে।  এটি একটি স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি যা শিশুর মানসিক, সামাজিক এবং ভাষাগত উন্নয়নকে প্রভাবিত করে।  অর্থাৎ , এর প্রভাবের মাত্রা এবং লক্ষণ বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।  অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণত তিন বছরের শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং এটি জীবনব্যাপী চলতে পারে। 

অটিজমের সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে জানা যায়নি।  তবে গবেষণায় জানা গেছে , এটি প্রধানত জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণে হতে পারে।  কিছু শিশুদের ক্ষেত্রে জেনেটিক প্রবণতা এবং পরিবারের মধ্যে পূর্বের অটিজমের ইতিহাস থাকলে এর সম্ভাবনা বাড়ায়।  এছাড়া জন্মের সময় কিছু পরিবেশগত সমস্যা যেমন ইনফেকশন , মস্তিষ্কের বিকাশে বিঘ্ন বা জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাবও অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।  তবে এখন পর্যন্ত অটিজমের কোনও একক কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। 

অটিজমের প্রভাব শিশুদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে দেখা যায়।  বিশেষ করে সামাজিক , ভাষাগত এবং আচরণগত দিক থেকে।  অটিস্টিক শিশুদের মাঝে সাধারণ যে সব লক্ষণগুলি দেখা যায় তা হলো:

সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা: 

অটিস্টিক শিশুরা সাধারণত অন্যদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন বা যোগাযোগ করতে সমস্যা অনুভব করে।  তারা কখনো কখনো একাকী থাকতে পছন্দ করে এবং অন্যদের সঙ্গে সহজভাবে মেলামেশা করতে পারে না।

ভাষাগত সমস্যা: 

অনেক অটিস্টিক শিশু ভাষা শিখতে এবং ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়ে।  তারা কথোপকথনে সমস্যা অনুভব করতে পারে এবং অন্যান্যদের কথাগুলি বুঝতে বা উত্তর দিতে পারে না।

আচরণগত সমস্যা: 

অটিস্টিক শিশুরা কিছু নির্দিষ্ট আচরণ পুনরায় পুনরাবৃত্তি করতে পারে , যেমন কোনো বিশেষ বিষয় বা কাজের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ।  তারা মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিত বা অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করতে পারে , যেমন নিজে নিজে কথা বলা বা কিছু নির্দিষ্ট কাজ বারবার করা।

মা-বাবার করণীয়: 

অটিস্টিক শিশুরা ভাষাগত সমস্যার মুখোমুখি হয় , তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগে সহায়ক ভূমিকা পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  মা-বাবা যদি কিছু সহজ এবং কার্যকরী কৌশল অনুসরণ করেন , তবে শিশুর ভাষাগত উন্নয়ন সহজ হতে পারে।  এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:

সহজ ভাষায় কথা বলুন:

অটিস্টিক শিশুরা অনেক সময় জটিল ভাষা বা বাক্য বোঝে না , তাই তাদের সঙ্গে সহজ এবং স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা প্রয়োজন।  সংক্ষিপ্ত বাক্য ব্যবহার করে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন , যাতে তারা সহজেই আপনার কথার অর্থ বুঝতে পারে।

শব্দ পুনরাবৃত্তি করুন:

শিশুর কাছে নতুন শব্দ শেখানোর সময় বারবার একই শব্দ ব্যবহার করুন।  উদাহরণস্বরূপ, “এটা একটা পেন। পেন লেখা কাজে লাগে।”  এই ধরনের পুনরাবৃত্তি শিশুর ভাষার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করুন:

শিশুর সঙ্গে কথা বলার আগে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।  শিশুকে আপনার দিকে তাকাতে উৎসাহিত করুন এবং ধীরে ধীরে কথা বলুন। এতে তাদের আরও ভালোভাবে আপনার কথাগুলি শোনা এবং বুঝতে সাহায্য করবে।

অভিভাবকের ধৈর্য:

অটিস্টিক শিশুদের ভাষাগত সমস্যা সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য অত্যন্ত ধৈর্য ও সময় প্রয়োজন।  তাদের যখন কথা বলার দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করতে হবে , তখন কখনোই বিরক্ত বা হতাশ না হয়ে , তাদের প্রয়োজনে ধৈর্যের সঙ্গে পুনরাবৃত্তি করুন।

পেশাদারদের সাহায্য নিন:

অটিস্টিক শিশুর ভাষা সমস্যা মোকাবিলায় পেশাদার সহায়তা , যেমন স্পিচ থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।  একজন পেশাদার ভাষা বিশেষজ্ঞ শিশুর ভাষার বিকাশের জন্য উপযুক্ত কৌশল এবং অনুশীলন প্রদান করতে পারেন।

অটিজম একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির তৈরি করতে পারে।  তবে এটি একটি মানসিক অবস্থান যা বিশেষ সাহায্য ও সহায়তার মাধ্যমে মোকাবিলা করা সম্ভব।  অটিজমের জন্য কোনো একক চিকিৎসা নেই, তবে পরিবারের সাহায্য , বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক , স্পিচ থেরাপিস্ট , আচরণগত থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য পেশাদারদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।  সঠিক সহায়তার মাধ্যমে অটিস্টিক শিশু তাদের পরিপূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে  এবং তারা সুন্দরভাবে সমাজে মিশে যেতে পারে।  কেননা , শিশুর ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশের জন্য মা-বাবার দিকনির্দেশনা এবং ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন অটিজম | শিশু