লাইফস্টাইল

শিশু খাচ্ছে না : কারণ ও খাওয়ানোর টিপস

আপনার শিশু ৬ মাস বয়সী হয়ে উঠলে, সে শক্ত খাবারগুলির সাথে পরিচয় করার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।আর আপনার ছোট্টটি যদি চটপট সব খেয়ে নেয়, তবে আপনি গর্ববোধ করবেন, তবে অধিকাংশ বাচ্চাই এই পরিবর্তনটিকে দ্রুত গ্রহণ করে না।

আপনার শিশুর না খাওয়ার পেছনে অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে আর তাই বলে এখনই আপনার তাকে নিয়ে এর জন্য ডাক্তারের কাছে ছোটার প্রয়োজন নেই। জেনে নিন আপনার সন্তান কেন তার খাবার খেতে চাইছে না তার কারণগুলি সম্পর্কে এবং সেই সাথেই তাকে খাওয়ানোর কিছু পরামর্শ জানুন।

আপনার শিশু ভালোভাবে না খাওয়ার কারণ :

আপনার শিশূকে ঠিকমত না খেতে দেখাটা আপনার কাছে একটা সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। কেন সে খাচ্ছে না তা সে আপনাকে বলতে সক্ষম হবে না।এটি আপনার পক্ষে জটিল করে তোলে।আপনার বাচ্চা কেন তার খাওয়ার খাবারগুলিকে প্রায়ই প্রত্যাখ্যান করে চলে তারই কিছু সম্ভাব্য কারণ এখানে দেয়া হল-

১.খুব বেশি তরল

আপনার ছোট্টটিকে খুব বেশি তরল খাওয়ানোটাও তার না খেতে চাওয়ার একটা কারণ হতে পারে।তা সে ফলের রস হোক কিম্বা বুকের দুধ, আপনি যদি তাকে শক্ত খাবারটি খাওয়ানোর আগেই এই তরলগুলি খুব বেশি মাত্রায় খাইয়ে ফেলেন, বাচ্চা আর কিছুই খেতে চাইবে না।

২.শব্দে চিত্ত বিভ্রান্তি

আপনার শিশু টেলিভিশন, বাইরের আওয়াজ, উচ্চ সঙ্গীত ইত্যাদির মত অসংখ্য জিনিসের শব্দে বিভ্রান্ত হয়ে পরতে পারে।শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশকে পৃথকভাবে একাত্মিকরণ করে আর তাই শব্দের মত একটি অতি সহজ বিষয়ও খাবার থেকে তাদের মনোযোগকে কেড়ে নিতে পারে।

৩. ভরা পেট

কখন কখনও আপনার শিশু হয়ত না খেতেও চাইতে পারে কারণ আগের খাবার হয়ত তার পেটটাকে ভরিয়ে ভার করে রাখতে পারে। শিশু যদি খাবার দেখেই ছিটকে পালিয়ে যায়, মুখ চেপে বন্ধ করে রাখে এবং তার খাবারের প্লেটের চামচটাকে দূরে ঠেলে দেয়, তা হলে বুঝতে হবে তার পেট ভরা।

৪.নতুন কিছু চায় না

আপনার দেয়া নতুন খাবারটা যদি আপনার শিশু না পছন্দ করে, সে খুব সম্ভবত সেটা খেতে চায় না।একজন অভিভাবক হিসেবে, আপনি এই পরিস্থিতিটির মোকাবিলা করতে এবং আপনার বাচ্চাকে সময়ের সাথে এই পর্ব কাটিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে সহায়তা করতে পারেন।

৫..অ্যালার্জি

কয়েকটি বিশেষ খাবারে আপনার শিশুর অ্যালার্জি প্রবণতা থাকতে পারে এবং সে হয়ত আপনাকে এও বলার চেষ্টা করবে যে, সেই নির্দিষ্ট খাদ্য আইটেমটি তার পক্ষে ভালো নয়।তার আচরণগুলির দিকে লক্ষ্য রাখুন, কোনওরকম অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া তার দেহে দেখা দেয় কিনা তা খেয়াল করুন আর দেখুন তার কোনও শারিরীক সমস্যা হচ্ছে কিনা।

৬.শিশুর ক্রিয়াকলাপ

আপনার শিশুর খিদে পাওয়াটা নির্ভর করবে সে কতটা সক্রিয় তার ওপর।তাই বলে আমরা প্রতিটি খাবার খাওয়ানোর আগে বা পরে বাচ্চার ক্রিয়াকলাপগুলি চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই না; তবে সারাদিন ধরে যথাযথ ব্যবধানে তার পর্যাপ্ত ক্রিয়াকলাপগুলি করাকে নিশ্চিত করুন।একটি চটপটে সক্রিয় বাচ্চার মধ্যে ভালভাবে খাওয়ার প্রবণতা থাকবে, যেখানে কম সক্রিয় বাচ্চাদের মধ্যে খাওয়ার ইচ্ছেটাই থাকে না বা খাবার প্রত্যাখ্যান করতে বেশি দেখা যায়।

৭.খাবার সময়

প্রত্যহ একটা নির্দিষ্ট সময়েই আপনার সন্তানকে খাওয়ানোর অভ্যাস রাখুন এবং সেইমতই রোজ চলা নিশ্চিত করুন কারণ সময়ের কোনওরকম পরিবর্তন হলে হয় তার অতিরিক্ত ক্ষিদে পেয়ে যেতে পারে অথবা ক্ষিদে লোপ পেতে পারে।বাচ্চার খাওয়ার কোনও একটা সময়ও যেন তাকে খাওয়ানো বাদ না পড়ে।

আপনার শিশুকে খাওয়ানোর কয়েকটি টিপস

আপনার ছোট্ট শিশুটিকে আপনি যা খাওয়াতে চান তা খেতে রাজী করানোর জন্য আপনার ব্যস্ত অভিভাবকত্বের সময়সূচির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন এমন কয়েকটি সহজ টিপস এখানে দেয়া হল-

১. আপনার সন্তানকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে দিন

আপনার সন্তানকে যখন একটু বড় হয়ে উঠবে তাকে নিজেকে একা একা খেতে দিন এবং জোর করে খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন।এই সময় আপনি আপনার বাচ্চার সাথে ফিঙ্গার ফুডগুলির পরিচয় করাতে পারেন যেগুলি সে নিজেই হাতে তুলে খেতে পারে। তাকে খাবার খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।

২. তার পছন্দের মত করে খাদ্য চয়ন করুন

আপনি যদি আপনার শিশকে পেটুকের মত স্বাগ্রহে তার খাবারটিকে ভোজন করতে দেখতে চান, তাহলে তাকে নানা ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি দিন।আপনি আপনার ছোট্টটির জন্য যাই রান্না করুন না কেন, সবকিছুর মধ্যেই আপনার সৃজনশীল প্রতিভাটিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। শিশুরা রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই তারা সেই খাবারগুলিকেই বেশ আকর্ষণীয় ভাবেই গ্রহণ করবে।

৩. ভয় দেখাবেন না

‘তোমার খাবারের থালা পরিষ্কার না হলে কিন্তু কোনও খেলনা দিয়ে খেলতে দেব না’- এ ধরণের কোনও কথা বলে আপনার ছোট্টটিকে যেন ভয় দেখাবেন না।এটা কেবল একটা শক্তির লড়াই গড়ে তোলে, আর আপনার বাচ্চাও এতে সেরকম কোনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

৪. লোভ দেখাবেন না

ঠিক ভয় দেখানোর মতই লোভ দেখানোও শিশুদের ক্ষেত্রে সর্বদা কার্যকর হয় না।যদি আপনি সেইসকল বাবা-মায়ের মধ্যে একজন হন, যারা তাদের সন্তানদের প্রায়শই খাওয়ার সময় বলে থাকেন যে, ‘আরও একবার খেলেই একটা চিপস পাবে’ তবে সেক্ষেত্রে আপনি কিন্তু আপনার নিজের সন্তানকে অস্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাসের প্রতিই পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছেন।

৫. একটা পারিবারিক সম্পর্ক

খাবারটাকে পরিবারের এটা অঙ্গ করে তোলার চেষ্টা করুন।আপনার ছোট্টটি যদি তার অন্যান্য ভাই–বোন কিম্বা মা–বাবাদের তাদের নিজস্ব পছন্দের খাদ্যগুলি গ্রহণ করতে দেখে, তবে তারও এই একই কাজ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৬.পুরোপুরি বাদ দেবেন না

কোনও নির্দিষ্ট খাবার না খাওয়ার ব্যাপারে যদি তারা তাদের দৃঢ় মতবাদ প্রকাশ করে, তাহলে মেনুর থেকে সেটিকে আপনার বাচ্চার জন্য পুরোপুরি বাদ দেবেন না।বাচ্চারা নতুন স্বাদের সাথে ধীরে ধীরে সামঞ্জস্য গড়ে তোলে, আর আপনার উচিত যেকোনও নতুন খাবারকে আপনার বাচ্চার ডায়েটের মধ্যে বার বার রেখে সেটির সাথে তার পরিচয় করানো।

৭.খাদ্যের উপযুক্ত গঠণ বাছুন

একবার শক্ত খাবারে আপনার শিশুকে রূপান্তরিত করার পর, আপনি ধীরে ধীরে খাদ্যের গঠণের সাথে তার পরিচয় করানো নিশ্চিত করুন।আপনার ছোট্টটিকে যেন খুব বড় টুকরোর খাবার খাওয়াবেন না, সে সেগুলিকে গিলতে সক্ষম হবে না।তাকে শক্ত খাবার খাওয়ানো শুরু করুন পিউরি দিয়ে বা এর জন্য বেছে নিতে পারেন স্যুপগুলিকেও। কিছুদিন পর থেকে অন্য শক্ত খাবারগুলির সাথে আবার এক এক করে তার পরিচয় করানোর চেষ্টা করতে পারেন।

৮. ময়লা করতে দিন

খাবার সময় আপনার শিশুকে নিজের ইচ্ছে মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেতে দিন।বাচ্চারা নতুন জিনিসগুলি চাক্ষুষ করতে পছন্দ করে এবং প্রতিটি খাবার সময়ই তাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা উচিত।খাবারগুলিকে তারা যেভাবেই অণ্বেষণ করতে চায় তাদের সেভাবেই তা করতে দিন! তারা চটকাবে, গন্ধ শুঁকবে এবং সারা ঘর জুড়ে তা ছড়াবে এটা বোঝার জন্য খাবার হিসেবে পরিচিত এই অদ্ভুত জিনিসটা আসলে কি।

৯..তাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করুন

তারা যদি কোনও একটা নির্দিষ্ট জিনিস পছন্দ না করে, তার বাহ্যিক দর্শনটা পরিবর্তন করে দিয়ে সেটাকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলুন।তারা যে খাবারগুলি পছন্দ করে না, সেগুলিকে তাদের পছন্দের মত করে তুলে তাদের কাছে তার আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।খাবারগুলিকে একটা চটকানো রূপে তাদের কাছে পরিবেশন করুন যাতে তারা তাদের অপছন্দের খাবারটাকে সনাক্ত করতে বা সেই চটকানো খাবার থেকে আলাদা করতে না পারে।

১০. বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ

একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা সর্বদা ভালো। তিনি হতে পারেন একজন পুষ্টিবিদ বা শিশু বিশেষজ্ঞ যিনি আপনার শিশুর খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে আপনার শিশুর জন্য উপযুক্ত সমাধানের পরামর্শ দিতে পারেন।

 

জেএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন শিশু | খাবার